চবির ‘ফ্রি’ ইন্টারনেটে উল্টো ভোগান্তি, ‘এমবি’ কিনে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিনামূল্যের ১৫ জিবি ইন্টারনেট ডাটার সুফল পাচ্ছে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ফ্রি ডাটা নিয়ে উল্টো ভোগান্তিরই শিকার হচ্ছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ১৫ জিবি ইন্টারনেট ডাটা দিয়ে জুম অ্যাপসহ কয়েকটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারার কথা থাকলেও অনেকেই তা পারছেন না। কারও কারও হোয়াটসঅ্যাপ কানেক্ট হলেও জুম কানেক্ট হয় না। ডাটা থাকা সত্ত্বেও কেটে নেওয়া হচ্ছে টাকা। তাই বাধ্য হয়ে ‘এমবি’ কিনে অনলাইনে ক্লাস করছেন তারা। এছাড়া কানেক্ট করা গেলেও নেট স্লো থাকায় বার বার ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। এদিকে এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করে তা সমাধানের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি মাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রবি সিমের মাধ্যমে ১৫ জিবি ডাটা বিনামূল্যে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। এর জন্য নির্দিষ্ট ফরমে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বিনামূল্যের ডাটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ হাজার ৬০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আবেদন করেন। পহেলা নভেম্বর থেকে কয়েক কিস্তিতে ৯ হাজার ৪১৫ জনের কাছে এই ১৫ জিবি ডাটা পৌঁছে দেয়া হয়। বাকিদের সিমে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে মেসেজ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ডাটা দিয়ে ব্যবহার করা যাবে শুধুমাত্র জুম, গুগল ড্রাইভ, বিডিরেন, হোয়াটসঅ্যাপ, চবি ওয়েবসাইট, হটমেইল এবং ইয়াহু মেইল।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফ্রি ডাটা দিয়ে ওই সাতটি ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যাবে— এমন কথা বলা হলেও ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করেও তারা জুম অ্যাপ কানেক্ট করতে পারেন না। আবার অনেকে কানেক্ট করতে পারলেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় বার বার ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। ফলে ক্লাস মনোযোগ হারাতে হচ্ছে তাদের।

আরবি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ খালেদ হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া ফ্রি ১৫ জবি ইন্টারনেটর জন্য আবেদন করেছি নির্ধারিত সময়ে। গত ৪ নভেম্বর তার সিমে ১৫ জিবি ডাটা পাঠায় মোবাইল অপারেটর রবি। তবে আট দিন ধরে চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কোনো অ্যাপেই কানেক্ট করতে পারছি না ওই ডাটা দিয়ে। তাই বাধ্য হয়ে এমবি কিনে অনলাইনে ক্লাস করছি।

একই অভিযোগ জানালেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমাইয়া তামরীনও। তিনি বলেন, ‘১৫ জিবি ডাটা এখনো পর্যন্ত কানেক্টই করতে পারি নাই। এমবি থাকা সত্ত্বেও কেটে নেওয়া হচ্ছে টাকা।’

আইন বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর ফ্রি ১৫ জিবি ডাটা পেয়েছি। এই ডাটা দিয়ে হোয়াটস অ্যাপ ও ইমেইল চালাতে পারলেও অনলাইনে জুম অ্যাপে ক্লাস করতে পারছি না।’

বাংলা বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিব এম ফাহাদ বলেন, ‘ফ্রি এমবি দিয়ে ক্লাস করার জন্য একদিন ৩৯ মিনিট অপেক্ষা করেও ক্লাসে কানেক্টে হতে পারিনি। কী হবে এসব এমবি দিয়ে?’

এদিকে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফ্রি ইন্টারনেটের জন্য ১১ হাজার ৬০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৪১৫ জনের কাছে এই ১৫ জিবি ডাটা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যারা পাননি তাদের কেউ ভুল নাম্বার দিয়েছে, আবার কারও নাম্বার ব্যবহৃত হচ্ছে না। তাই তাদের নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে মেসেজ দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করলে তারাও ইন্টারনেট পেয়ে যাবেন।’

ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকে ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে জুম অ্যাপে ক্লাস করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। রবি কোম্পানি দুই একদিনে তা সমাধান করে দেবে। তারা দুইটা হটলাইন নাম্বার দেবে। এরপরও যাদের সমস্যা থাকবে তারা ওই নাম্বারগুলোতে যোগাযোগ করে সমাধান করে নিতে পারবে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। রবি কোম্পানিকে আমরা জানিয়েছি। শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কারও এমন সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলবেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!