চবির নেতা রুবেল সাহায্যের পোস্ট দিয়ে মোবাইলই বন্ধ রেখেছেন

১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ‘আদু ভাই’ বনে যাওয়া ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের কর্মকাণ্ড নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই নেতাকে দিয়ে পা টিপিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়া রেজাউল এবার আলোচনায় এসেছেন অর্থসংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রেজাউল নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে অর্থসংকটের থাকা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার কথা জানান। যোগাযোগের জন্য দুটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয় ওই পোস্টে। কিন্তু এরপর থেকেই নম্বর দুটিতে কল দিলেই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউলকে নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ। চলছে নানা হাস্যরস।

রেজাউল হক রুবেলের দেওয়া সেই পোস্টে লেখা হয়— ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থানকারী কোনো ভাই কিংবা বোন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেহরি কিংবা ইফতারের কষ্টে থাকলে, দয়া করে আমাকে জানাবেন। সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সহিত আমি আপনাদের নিকট ইফতার কিংবা সেহেরি পৌঁছে দিবো কিংবা ব্যবস্থা করে দিবো। মোবাইল নং: ০১৬৭৪০২৮১৭৪, ০১৮১২৮৯৯৫৫৬। সকলকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।’

রেজাউলের ওই পোস্টে মমিনুল ইসলাম মোহন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ‘ভাই নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।’

৫৮ হাজার সদস্যের ‘চবি ঝুপড়ি’ নামে এক ফেসবুক গ্রুপে পরিচয় গোপন রেখে একজন লিখেছেন, ‘অভাবের মধ্যে পোস্টটি দেখে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বেশ কয়েকবার কল দিয়েও কোনো রেসপন্স পাইনি। আমার মতো হয়তো আরো অনেক অসহায় শিক্ষার্থীও কল দিয়ে কোনো সাড়া পায়নি৷ শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্ব নিয়ে মজাটা না করলেও পারতেন লিডার।’

জাহিদুল হাসান নামের আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘খাবারের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে কথা বলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাড়ান। খাবারের দাম সহনীয় রাখতে বলেন। শিক্ষার্থীদের একটা ইমেজ আছে, কেউ হাত পাতবে না। লোকদেখানো স্ট্যাটাস না দিয়ে যেটা প্রয়োজন, সেটা করেন।’

মো. আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভাইকে মানবতার পাশাপাশি রমজানের রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।’ আনোয়ারের এই মন্তব্যে ৫৫ জন হাসির ইমোজি দিয়েছেন।

রেজাউলের পোস্ট শেয়ার দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শরীফ উদ্দিন লিখেছেন, ‘যেসব দোকানদার আপনার কাছে বাকি পায়, আশা করি আগে তাদের পাওনা পরিশোধ করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে এই প্রতিবেদক রেজাউল হক রুবেলের দুই মোবাইল নম্বরে টানা দুদিন যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হননি।

সম্প্রতি দুই নেতাকে দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের পা টেপানোর একটি ছবি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এমন কাণ্ডের সমালোচনা করে ফেসবুকে সরব হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের একটি কক্ষ থেকে তোলা সেই ছবিতে দেখা যায়, চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক শুয়ে আছেন বিছানায়। দুই পাশে দুই নেতা বসে তার পা টিপছেন।

এদের একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ এবং অপর জন উপক্রীড়া সম্পাদক শফিউল ইসলাম।

এর আগে নারীবিষয়ক বিভিন্ন ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হন রুবেল। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি নিয়ে সংঘাতে জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে।

২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর পাস করা রেজাউল হক রুবেল এখনও শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষটি দখল করে রেখেছেন। সেখানেই এই কাণ্ড ঘটেছে। গত অন্তত ১৭ বছর ধরে তিনি ক্যাম্পাসে বসবাস করছেন।

আরএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!