চবিতে ‘সার্ভার জটিলতা’, তবুও এক সপ্তাহে ৬১ হাজার শিক্ষার্থীর আবেদন

ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন ৪ হাজার ৯২৬ জন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর এক সপ্তাহে ‘সার্ভার জটিলতার’ মধ্যেও আবেদন করেছে প্রায় ৬১ হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। চারটি ইউনিট ও দুইটি উপ ইউনিটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছে ‘এ’ ইউনিটে।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল পৌঁনে ১১ টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছে ৬০ হাজার ৭৮৬ জন শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করেছে ২৪ হাজার ৫১৩ জন। ‘বি’ ইউনিটে আবেদন করেছে ১২ হাজার ৭৫৮ জন, ‘সি’ ইউনিটে ৪ হাজার ১৭৭ জন ও ডি ইউনিটে ১৬ হাজার ২৮৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। অন্যদিকে দুইটি উপ ইউনিটের মধ্যে ‘বি-১’ ইউনিটে আবেদন করেছে ১ হাজার ৩৭০ জন ও ‘ডি-১’ ইউনিটে আবেদন করেছে ১ হাজার ৬৮২ জন শিক্ষার্থী।

এ দিকে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হওয়ার পর থেকে আবেদন করতে গিয়ে বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে আবেদন ফি জমা দেওয়ার পরও কনফারমেশন স্লিপ না পাওয়া, আবেদন ফি-ই জমা দিতে না পারা, আবেদনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অযোগ্য দেখানো, হেল্পলাইনে কল দিয়ে কাউকে না পাওয়াসহ একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। যদিও বর্তমানে এসব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বেলা পৌঁনে ১১ টা পর্যন্ত ৬০ হাজার ৭৮৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছে। প্রথমদিকে একসাথে অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করতে সার্ভারে প্রবেশ করায় সার্ভার কিছুটা স্লো ছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই আবেদন করতে পারছে। আগামী ৩০ এপ্রিল রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা চলবে ৩০ এপ্রিল রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। তবে ২ মে রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার প্রতিটি ইউনিটেই আবেদনের ন্যূনতম জিপিএ অন্তত শূন্য দশমিক ৫০ বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র যারা ২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারাই এবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। ভর্তিচ্ছুদের চবি ভর্তির ওয়েবসাইট (https://admission.cu.ac.bd) এর মাধ্যমে প্রচারিত অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে।

আবেদনের যোগ্যতা
‘এ’ ইউনিটের অধীনে বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ এবং সমুদ্রবিজ্ঞান ও মৎসবিদ্যা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ-৮.০০ এবং প্রতিটিতে আলাদাভাবে জিপিএ-৪ নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘বি’ ইউনিটের অধীনে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের মোট জিপিএ-৮.০০ এবং প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০; মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের মোট জিপিএ-৭.৫ এবং প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.০০; ব্যবসায় শিক্ষা শাখার সর্বনিম্ন দুটিতে মোট জিপিএ-৮ এবং প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০ অর্জন করতে হবে।

‘বি১’ উপ-ইউনিটের অধীনে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ অধিভুক্ত চারুকলা ইনস্টিটিউট, নাট্যকলা বিভাগ ও সঙ্গীত বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের জন্যও একই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘সি’ ইউনিটের অধীনে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ-৮.০০ এবং প্রতিটিতে আলাদাভাবে জিপিএ-৩.৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে৷

‘ডি’ ইউনিটের অধীনে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ (আংশিক) ও জীববিজ্ঞান অনুষদের দুটি বিভাগের (আংশিক) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ-৭.৫০ এবং প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘ডি১’ উপ-ইউনিটের অধীনে শিক্ষা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ-৬.০০ এবং প্রতিটিতে আলাদাভাবে জিপিএ- ২.৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরীক্ষা পদ্ধতি
ভর্তি পরীক্ষা বরাবরের মতোই ১২০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) ও বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ থেকে যুক্ত হবে।

আবেদন ফি
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিট/উপ-ইউনিটে আবেদন ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সাথে প্রসেসিং ফি যুক্ত হবে। আবেদন ফি বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে দেওয়া যাবে।

আসন সংখ্যা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এতে ৪ হাজার ৯২৬টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে ‘এ’ ইউনিটে আসন রয়েছে ১ হাজার ২১৪টি, ‘বি’ ইউনিটে ১ হাজার ২২১টি, ‘সি’ ইউনিটে ৪৪২টি, ‘ডি’ ইউনিটে ১ হাজার ১৫৭টি।

উপ ইউনিটের মধ্যে ‘বি১’ ইউনিটে ১২৫টি ও ‘ডি১’ ইউনিটে ৩০টি আসন রয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি
করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাম্পাসেই ভর্তি পরীক্ষার আট দিনব্যাপী সময়সূচি নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় তিনটি ইউনিটের পরীক্ষার জন্য দুদিন করে সময় রাখা হয়েছে। একটি ইউনিট ও দুটি উপ-ইউনিটের জন্য রাখা হয়েছে আরও দুদিন।

সময়সূচি অনুযায়ী ২২ ও ২৩ জুন ‘বি’ ইউনিট, ২৪ ও ২৫ জুন ‘ডি’ ইউনিট, ২৮ ও ২৯ জুন ‘এ’ ইউনিট ও ৩০ জুন ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১ জুলাই উপ-ইউনিট ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!