চবিতে রাতে নেমে এলো ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের বিশাল অজগর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস থেকে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ১০ কেজি ওজনের একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে জঙ্গলে সাপটি ছেড়ে দেয়া হয়।

রোববার (৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশ থেকে শিক্ষার্থীরা সাপটি উদ্ধার করেন। এসময় সাপের কামড়ে দুজন আহতও হন।

সাপটির নাম রক অজগর (Rock python Snake)। এই প্রজাতির সাপ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোটামুটিভাবে রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সাপটি উদ্ধারে থাকা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদেক হোসেন টিপু জানান, ‘রাতে বাসায় ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় সাপটি দেখতে পাই। পরে কয়েকজন ছোট ভাইকে খবর দিয়ে এনে আমরা সাপটি উদ্ধার করে নিরাপত্তা দপ্তরে পাঠিয়ে দিই। এসময় আমি এবং এক ভর্তিচ্ছু ছোট ভাই সাপের কামড়ে আহত হই। চবি মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসার জন্য আসি।’

এই বিষয়ে চবির নিরাপত্তা দপ্তরের সুপারভাইজার মো. আবুল বশর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সাপটি উদ্ধার করে নিরাপত্তা দপ্তরে নিয়ে আসে। এটি প্রায় ১৫ ফুট লম্বা এবং ওজনে ১০ কেজির মতো। আমরা প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকদের পরামর্শে সাপটি পুনরায় জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছি।’

সাপটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই সাপটি রক পাইথন। আমরা সাপটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছি। এই প্রজাতির সাপ আমাদের ক্যাম্পাসে মোটামুটিভাবে রয়েছে। আমার ১০ বছর শিক্ষকতা জীবনে ক্যাম্পাস থেকে অন্তত ৫০টির মতো উদ্ধার হতে দেখেছি।’

জনপদে নেমে আসার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই প্রজাতির সাপ জনপদে চলে আসার কয়েকটা কারন থাকতে পারে। খাবারের সন্ধানে আসতে পারে অথবা আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চলে আসতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখার মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী ও ভেনম রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষানবিশ গবেষক রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই প্রজাতির সাপ চট্টগ্রাম রিজিওনে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসেও এই প্রজাতির সাপ অনেক আছে। কিন্তু পাহাড় পুড়িয়ে দেয়ায় এদের আবাস্থল অনেকটা হুমকির মুখে। তাই এরা লোকালয়ে চলে আসে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই পাহাড় পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাপ সাধারণত কারো ক্ষতি করে না। কিন্তু কেউ তাদের বিরক্ত করলে তারা আত্মরক্ষার্থে মাঝেমধ্যে কামড় দেয়। তাই সাপ দেখলে আমাদের উচিৎ মেরে তাকে তার গন্তব্যে যেতে সাহায্য করা।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছরই এই প্রজাতির সাপ লোকালয়ে নেমে আসতে দেখা যায়। গত বছর ১৭ মে পাহাড় থেকে নেমে আসা ১৪ ফুট দৈর্ঘ্যের ১৫ কেজি ওজনের এমনি এক অজগরের সন্ধান মিলে। পরবর্তীতে সেটি উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে ২০১৯ সালের একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লুইসগেট এলাকা থেকে স্থানীয়রা একই প্রজাতির ও আকৃতির একটি অজগর সাপ উদ্ধার করে। পরে সেটি জীববিজ্ঞান অনুষদের পাশের পাহাড়ে অবমুক্ত করা হয়।

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!