চবিতে ভরা সভায় হঠাৎ ‘গরম’ ভিসি শিরীণ, ডিনের সঙ্গে বাকযুদ্ধ সিন্ডিকেটের ভোট নিয়ে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের নির্বাচন নিয়ে একের পর এক ঘটছে নাটকীয় সব ঘটনা। সর্বশেষ ভরা মজলিসে উপাচার্যের সঙ্গে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিনের সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে নির্বাচন চেয়ে উপাচার্যের কাছে ডিনদের চিঠি দেওয়ার একমাসের মধ্যেই এবার চিঠি দেয় শিক্ষক সমিতি। চিঠিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এক মাস সময় বেধে দেওয়া হয়। অন্যদিকে চিঠি দেওয়ার পরও কেন নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাওয়ায় উপাচার্যের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনার পর এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে তোলপাড়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ২৫ (বি) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটে ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরির ৬ টি পদে শিক্ষকদের নির্বাচিত সদস্যরা প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে যার ৬টি পদই শূন্য রয়েছে। এদের মধ্যে ডিন ও প্রভোস্ট প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়ায় শূন্য। এছাড়া অধ্যাপক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি অবসরে যাওয়া, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি পদোন্নতি পাওয়া ও সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ায় এই ৪টি পদ কয়েক বছর ধরে শূন্য। সর্বশেষ এই চার ক্যাটাগরির নির্বাচন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর।

এক মাস সময় বেধে দিয়ে শিক্ষক সমিতির চিঠি

এদিকে এক মাসের মধ্যে শিক্ষক ক্যাটাগরির নির্বাচন দিতে উপাচার্যকে গত বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ওই চিঠিতে লেখা হয়, দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকায় শিক্ষকদের দাবি ও অধিকারসমূহ সিন্ডিকেট সভায় যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এমতাবস্থায় আগামী এক মাস তথা ২ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে সিন্ডিকেট নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের নিকট পুনরায় জোর দাবি জানাচ্ছে।

শিক্ষক সমিতির শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধিরা সরাসরি শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত হন। যার কারণে শিক্ষকদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বেশি থাকে। সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের স্বার্থ, অধিকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, ভাবমূর্তি, গবেষণা নিয়ে তারা বেশি কাজ করতে পারেন। কিন্তু শিক্ষকেরা মনে করে দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য না থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা যে বৈষম্যের শিকার হন, তা হতেন না।

ডিনের সঙ্গে উপাচার্যের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

এদিকে সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরিতে নির্বাচন দিতে গত ১২ অক্টোবর উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন সব অনুষদের ডিন। কিন্তু চিঠি দেওয়ার ২২ দিন পরও নির্বাচনের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার এক সভায় এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে জানতে চান ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী। এ সময় উপাচার্য বসা থেকে উঠে ডিনকে শাসাতে থাকেন এবং নির্বাচন দেবেন না বলে জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন দুজন ডিন বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিনি (উপাচার্য) আইন ও স্বচ্ছতার শাসনে বিশ্বাসী নন। তিনি আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সিন্ডিকেটে ডিন, শিক্ষক ক্যাটাগরিতে নির্বাচন দিলে সেখানে প্রতিনিধিত্বশীল একটা পর্ষদ হবে। আমরা চাই প্রতিনিধিত্বশীল পর্ষদ, আর তিনি চান একপেশে পর্ষদ। যার কারণে নির্বাচন দিতে চান না। তিনি একপেশে গত সিন্ডিকেটে অডিও কেলেঙ্কারির সময় বাদ যাওয়া প্রার্থীসহ ১৭ জনের নিয়োগ তাঁর মনোনীত তিনজন সদস্য দিয়ে পার করিয়ে নিয়েছেন। ওনাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম নির্বাচনের জন্য স্মারকলিপি দেওয়ার পরও আপনি কেন নির্বাচন দিচ্ছেন না? উনি চিল্লাচিল্লি ও অশোভন আচরণ শুরু করলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (উপাচার্য) আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্থ একটা প্রশাসন পরিচালনা করছেন। উপাচার্যের চেয়ারে বসে তিনি এ ধরনের অশোভন আচরণ করতে পারেন না। ওনাকে ধৈর্য সহকারে সবকিছুর সমাধান বের করে আনতে হবে৷ কিন্তু তিনি সিন্ডিকেট নির্বাচন দিতে চান না, কারন তাঁর উদ্দেশ্য দুর্নীতি, তাঁর উদ্দেশ্য খারাপ। তাকে ইউজিসিও পর্যন্ত সতর্ক করেছে, আপনি এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারেন না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দের কাছে জানতে চাইলে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!