চবিতে পরীক্ষা বর্জন করে ‘খেয়ালখুশি’র জবাব দিল শিক্ষার্থীরা

ঠুনকো অজুহাতে ১১ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি আইইআর

ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকার ‘অজুহাতে’ ১১ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি না দেয়ায় পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ প্রায় ২৫ মাস পর তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় পরীক্ষা বর্জন করে প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বিকেল চারটার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর পর আজ থেকে আমাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের ১১ জনকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি। এদের মধ্যে দুই থেকে তিনজন নিয়মিত ক্লাস করেছে। বাকিদের কারো মা মারা গেছে, কেউ অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসাধীন ছিল। এই নিয়ে আমরা কয়েক দফা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলি। কর্তৃপক্ষ বলে ডকুমেন্টস দিয়ে গেলে তারা বিবেচনা করবে। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি আমরা ডকুমেন্টস দিয়ে আসি।’

তিনি বলেন, ‘১৫ তারিখ আমাদেরকে বলা হয় তোমার বাসায় চলে যাও আমরা রাতে মিটিং করে জানাবো। ১৬ জানুয়ারি আমাদের বলেছে ৪ জনকে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ আপনারা মুচলেকা, ছবি ও জরিমানা দিয়ে ফরম পূরণ করুন। এরপর আমরা যখন সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফরম জমা দিতে যাই, তখন বলে তোমাদের কারোই ফরম নেয়া হবে না। এরপর আমরা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেই তাদের মন গলাতে পারিনি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথমত আমাদের অলরেডি দুই বছর এমনিতেই গেছে, এরপর যদি এখন পরীক্ষা দিতে না পারি তাহলে আমাদের শিক্ষাজীবনই অনিশ্চিত হয়ে যাবে। কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করছে। আমরা যেন তাদের খেলার পুতুল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আগের ব্যাচগুলোতে উপস্থিতির হার কম থাকলে জরিমানা নিয়ে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হতো। কিন্তু এখন কারও আবেদন বা জরিমানা কোনোটিই গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিমান উপস্থিত না থাকায় এদের কয়েকজন পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাই সবাই পরীক্ষা বর্জন করেছে। এখন তারা বলে সবার পরীক্ষা নিতে হবে। এখন যাদের উপস্থিত কম ছিল তারা ফরম পূরণ করে নাই, তাদের প্রবেশ পত্রও নাই। আমরা কীভাবে পরীক্ষা নেবো?’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে মিটিং হচ্ছে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের করা কয়েকজন পরীক্ষা দিতে না পারায় সবাই পরীক্ষা না দিয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে জড়ো হয়েছে। আমরা তাদের সাথে কথা বলে দেখেছি অনেকে বিভিন্ন কারণে অনুপস্থিত ছিল। তাদের কেউ অসুস্থ ছিল, কারও মা মারা গেছে। বিষয় মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা যায়। আমরা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কাছে তাদের পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন একাডেমিক কমিটির সভায় সবার পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।’

প্রসঙ্গত, কয়েক দফা আন্দোলনের পর গত ১০ জানুয়ারি ২০১৮-১৯ সেশনের ১ম বর্ষের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২০ জানুয়ারি) বাংলা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৪ মাস ২০ দিন পর ১ম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এ পরীক্ষাতেও ১১ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিতির হার কম থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়ায় আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!