চবিতে নির্মাণকাজে দফায় দফায় হামলা ছাত্রলীগের, মার খেল শ্রমিকরাও

ফুটেজে চিহ্নিত বাংলার মুখ ও ভিএক্স গ্রুপের দুজন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের একটি নির্মাণকাজে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীরা শ্রমিকদের মারধর করে ও দুই লক্ষাধিক টাকার নির্মাণসামগ্রী নষ্ট করে। তবে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে না পারলেও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে ঘটনার কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। ওই ফুটেছে কয়েকজন হামলাকারীকে চিহ্নিত করা গেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ গ্রুপের কর্মী বলে পরিচিত।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকালে এসব ঘটনার বিবরণ দিয়ে নির্মাণকাজে নিরাপত্তা চেয়ে ও ঘটনার বিবরণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া।

ওই চিঠিতে ড. সালামত ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখেছেন, ‘দুই সপ্তাহ যাবত ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে কতিপয় সন্ত্রাসী বাধা প্রদান ও শ্রমিকদের মারধর করতেছে। গত রাত সোমবার (২৮ জুন) রাত সাড়ে আটটার দিকে অনুষদের পিছনের লোহার গেইট ভেঙে অনুষদে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা নিরাপত্তা প্রহরী ও আনসার সদস্যদের থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে সেখানে কাজের জন্য রাখা ৪০০ সিমেন্টের বস্তা কেটে পানি ঢুকিয়ে নষ্ট করে। এছাড়া জেনারেটর মেশিনের বেল্ট কেটে ফেলে, মোটর খুলে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, ইলেকট্রিক পাইপ খুলে ফেলে এবং রডের উপর রং ঢেলে দেয়।’

চিঠিতে আরও লেখা হয়, ‘আজ (মঙ্গলবার) ভোর ছয়টায় ঢালাই কাজের শ্রমিকদের ও ঢালাই কাজের সরঞ্জাম ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে।’

চবিতে নির্মাণকাজে দফায় দফায় হামলা ছাত্রলীগের, মার খেল শ্রমিকরাও 1

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত রোববার (২৭ জুন) সকালে ইলেকট্রিক কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে তাদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

এর আগে গত শনিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে ছাদ থেকে নামতে বাধ্য করেন তারা। এ সংক্রান্ত ৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, হামলাকারীদের প্রথমে একজন নিরাপত্তা প্রহরী পথ দেখিয়ে দেন। পরে ৭-৮ জনের একটি দল সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে অনুষদে প্রবেশ করে। এসময় তারা শ্রমিকদের মারধর শুরু করলে তাদেরকে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।

ভিডিও ফুটেজটি দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. রাকিব, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এস এইচকে রনি। এদের মধ্যে রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গ্রুপ বাংলার মুখ এবং রনি ভিএক্স গ্রুপের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বাংলার মুখ ও ভিএক্স নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী। এছাড়া সাইফুল ও শাওন নামের দুজন বহিরাগতকেও চিহ্নিত করা গেছে। এর আগে ১৭ জুন (বৃহস্পতিবার) দুপুরে শ্রমিকদের বেতন, কাজের ধরন ও সময় জেনে তাদের আর কাজে না আসতে বলে যায় ওই দুর্বৃত্তরা।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের অনুষদের নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে দুই সপ্তাহে পাঁচ দফা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা শ্রমিকদের মারধর করে এবং কাজ বন্ধ করে চলে যেতে বলে। গতকাল (সোমবার) রাতে তারা ৪০০ ব্যাগ সিমেন্টের বস্তা কেটে পানি ঢেলে নষ্ট করে। এছাড়া রডে রং দেয়া, মোটর ভেঙে ফেলা দুই লক্ষাধিক টাকার নির্মাণসামগ্রী নষ্ট করে। প্রতিটা হামলার পর পর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে বাংলার মুখের বাংলার মুখের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর তোহা ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়কে কয়েকবার ফোন করা হলে তারা ফোন ধরেননি।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ঘটনার ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আছে। তারা জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে কিছু চাঁদাবাজ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে। আমরা যদি তাদের চিহ্নিত করতে পারি তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় চাঁদাবাজদের ঠাঁই নাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!