চবিতে আইইআরের আরেক কাণ্ড, ২০১৮ সালের পরীক্ষা শেষ হয়নি তিন বছরেও

অনার্সের ফল না দিয়েই মাস্টার্সের রুটিন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর) ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রথম বর্ষের (বিশেষ) পরীক্ষা শেষ হয়নি তিন বছরে এসেও। এতে করে বিপদে পড়ে গেছেন ওই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৬ শিক্ষার্থী। একদিকে পরীক্ষা ঝুলে থাকায় তারা যেমন অনার্সের ফলাফল পাচ্ছেন না, অন্যদিকে অংশ নিতে পারছেন না মাস্টার্সের পরীক্ষায়ও।

বারবার কর্তৃপক্ষকে বলার পরও তারা দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। উল্টো তাদের বিষয় অমীমাংসিত রেখেই মাস্টার্সের রুটিন দিয়েছে তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। এতে এক বা একাধিক কোর্সে অকৃতকার্য হন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। পরবর্তী বছরে ওই কোর্সগুলোর পরীক্ষা দিলে আবারও তারা অকৃতকার্য হয়। পরে অকৃতকার্য ওই শিক্ষার্থী এবং মানন্নোয়ন থাকা মোট ৩৬ শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ওই কোর্সগুলোর ‘বিশেষ পরীক্ষা’ নিতে সম্মত হয়ে পরীক্ষার রুটিন দেয় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।

তবে তিনটি পরীক্ষা বাকি থাকতেই যখন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ইনস্টিটিউটটির বেশ কিছু শিক্ষককে তাদের পূর্বের কর্মস্থল চবি ল্যাবরেটরি কলেজে যোগ দিতে বলে তখনই শুরু হয় সমস্যা। এই শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত পরীক্ষা কমিটিই নিয়ন্ত্রণ করছিল ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের বিশেষ পরীক্ষা।

কলেজে চলে যাওয়ার সময় ওই শিক্ষকরা সাথে করে পরীক্ষার খাতাও নিয়ে যান। পরে শিক্ষার্থীদের অনুনয়-বিনয় ও বহু দেন-দরবারের পরে একটি কোর্সের খাতা ছাড়া বাকি কোর্সের খাতা ইনস্টিটিউটে ফেরত দেন তারা। পরে তিনটি পরীক্ষা অসমাপ্ত থাকায় ফলাফল প্রকাশ হয়নি এ পরীক্ষার। একই সাথে অমীমাংসিত এই পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগও নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সম্প্রতি তাদের এই পরীক্ষা ও ফলাফলের কোনো সমাধান ছাড়াই ওই শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে আইইআর কর্তৃপক্ষ। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এই পরীক্ষা শুরু হবে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা গত ২৮ জানুয়ারি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের মধ্যে নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে রাজি হয়। যদিও পরবর্তীতে আর কোনো আগ্রহ দেখায়নি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকেই মাস্টার্সের পরীক্ষা বলবৎ রাখে কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা এই সমস্যা নিরসনে বারবার যোগাযোগ করেছি। এটার জন্য দুটি আবেদনপত্র দিই। সর্বশেষ গত ২৮ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা আমাদেরকে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা দিতে পারবো কিনা? আমরা তাতে রাজি হয়ে যাই। কিন্তু পরে তারা কোন সুরাহা না করেই মাস্টার্স পরীক্ষার তারিখ ঠিক রাখে।

তিনি আরও বলেন, এই পরীক্ষা না হওয়ায় আমরা অনার্সের রেজাল্ট পাচ্ছি না। কোনো চাকরিতে আবেদনও করতে পারছি না। আমাদের সমস্যা সমাধান না করেই যদি এমএড পরীক্ষা শুরু করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, অনার্স শেষ হওয়ার পরেই মাস্টার্সের পরীক্ষা। তারা এখনও মাস্টার্স পাশ করে নাই। এটা একটা প্রক্রিয়ার বিষয়। আমরা তাদের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে চিঠি দিয়েছি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যে সিদ্ধান্ত দেয় সেটাই হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এটা তো ইনস্টিটিউটের কাজ। তারা পরীক্ষা কমিটি করবে, রুটিন করবে, পরীক্ষা নিয়ে নেবে। আমরা তো শুধু অ্যাপ্রুভ করবো। আসলে তাদের কিছু গ্যাপ হয়ে গেছে। আগামী রোববার আমরা উপাচার্য, ইনস্টিটিউট পরিচালকের সাথে বসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!