চন্দনাইশে চাঁদা না পেয়ে ৫০ বছরের পুরনো মা কালী সুইটসে তালা!

অর্ধশত বছরের প্রসিদ্ধ চন্দনাইশ কালিরহাটের মা কালী সুইটস প্রকাশ হরিপদের মিষ্টির দোকানে পাঁচদিন ধরে তালা ঝুলছে। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় বখাটে নাজিম উদ্দীন, লোকমান ও সৌরভের নেতৃত্বে একটি বখাটে সিন্ডিকেট পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে এ দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। এছাড়াও ‘শ্মশানের জায়গা নির্ধারণ কর’, ‘ঘরবাড়ি পোড়ানো হবে’, ‘ভারত চলে যা’ এসব কথা বলে হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বখাটেদের দিনরাত হুমকিতে ভয়ে কাতর পঁচাত্তর বছর বয়সী হরিপদ দেব এখন সন্তানদেরও চিনতে পারছেন না। সারাক্ষণই হাউমাউ করে কাঁদছেন তিনি। থানায় প্রতিকার চেয়ে কোন সুফল পায়নি তারা। সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন প্রাণে বেঁচে থাকার জন্য ওপারবাংলায় চলে যাবেন কী না!

chandanaish-maa-kali
ভুক্তভোগী পরিবার স্মারকলিপি দেন বাজার কমিটিকে

জানা গেছে, বখাটের মা কালি সুইটসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে ওই দোকানে রাতদিন পাহারায় বসে আছে। রাতের অন্ধকারে হরিপদের বাড়িতে গিয়ে দফায় দফায় হুমকিও দিচ্ছে। এদিকে বখাটেদের ভয়ে বৃদ্ধ হরিপদকে ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। পাঁচদিন ধরেই অব্যাহত হুমকিতে মানসিক শক্তি হারিয়েছেন হরিপদ।

স্থানীয় দোকানিরা জানান,বুধবার (৮ মে) রাতে হরিপদ মিষ্টির স্বত্বাধিকারীর ছেলে সুজিত দেবসহ দোকানের কর্মচারীদের মারধর করেছে স্থানীয় বখাটের সিন্ডিকেটের নাজিম উদ্দীন, মো. লোকমান ও সৌরভ উদ্দীন প্রকাশ টিটুসহ একদল বখাটে। তারা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে শ্মশানের জায়গা নির্ধারণ করতে এক সপ্তাহ সময় বেধে দেয় হরিপদকে। এ বখাটে সিন্ডিকেটের সদস্যরা আওয়ামী লীগের ব্যানারকে ব্যবহার করলেও চন্দনাইশ থানা আওয়ামী লীগের নেতারা এদের কাউকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদককে।

বরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি বেশ দুঃখজনক। মা কালি সুইটসের মিষ্টি আজকের নয়, এটি স্বাধীনতার আগে থেকেও প্রসিদ্ধ। যারা এখানে চাঁদা চেয়ে তালা দিয়েছে আমার জানামতে তারা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। তারা যদি আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে এর দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে কেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ, তবে খবরটি পেয়েছি আজ। আশা করি ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেবো।’

chandanaish-maa-kali
বখাটেদের ভয়ে বৃদ্ধ হরিপদকে ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেশব চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে ভুক্তভোগীরা সনাতনী সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় হয়তো ভয়ে থানায় আসছেন না।’

থানার ওসির এমন মন্তব্যকে দুঃখজনক বলেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য বীনাপানি দেব। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করতে থানায় কয়েকবার গিয়েও তারা মামলা নেয়নি। আজ সকালে মামলা না নিয়ে থানার ওসি এটিকে অভিযোগ আকারে নিতে মুন্সিকে নির্দেশ দেন। এরপর থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমাদের সাথে ওসির সরাসরি কথাও হয়েছে। আমরা তাকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছি। অথচ তিনি বলছেন, ‘আমরা অভিযোগ দিইনি।’

এ বিষয়ে বরকল পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অজিত ব্যানার্জি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বখাটেদের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা শংকিত। আমি নিজেও থানায় গিয়ে ওসির সাথে কথা বলেছি। সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা।

উল্লেখ্য, চন্দনাইশ উপজেলার বরমার কালিরহাটের এই মা কালি সুইটসের ‘হইরজ্জার মিষ্টির দোকান’ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের মালিকানায় এ দোকানটি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে থেকেই পরিচালনা করেছিল হরিপদের বড় ভাই কৃষ্ণপদ দেব। কৃষ্ণপদ মারা যাওয়ার আগে থেকেই এটি ছোট ভাই হরিপদ পরিচালনা করে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!