চতুর তিন বোনের ‘প্রেমের জালে’ চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা

নগ্ন ভিডিও করে টাকা হাতানোর ধান্ধা

তারা তিন বোন। টার্গেট তাদের চট্টগ্রাম শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। বানোয়াট ব্যবসাসহ নানা বাহানায় শুরুতে তারা ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফেলেন একের পর এক টোপ। এক পর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ‘প্রেমের সম্পর্ক’। সুযোগ বুঝে বাসায় আসার প্রস্তাব দেওয়া হয় কৌশলে। টোপ খাওয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সেই বাসায় যাওয়ার পরই তিন বোন অন্যরূপে আবির্ভূত হন। টার্গেট করা ব্যবসায়ীকে নগ্ন করে ভিডিও করা হয়। এরপর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা।

প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা সমাজের অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবারের হওয়ায় সামাজিক মানসম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেন না। প্রায় সব ক্ষেত্রেই মোটা অংকের টাকা হারিয়েও ঘটনাগুলোর কথা আর বাইরে জানাজানি হয় না। তিন বোন এরপর নতুন টার্গেটের খোঁজে বের হন।

গত আগস্টের শেষদিকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক মোহাম্মদ রফিকের (ছদ্মনাম) কাছে ফ্ল্যাট কেনার জন্য তিন তরুণী যোগাযোগ করেন। ফ্ল্যাট কেনার নামে তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হলেও শেষটা হয়েছে বাসায় ডেকে নিয়ে নগ্ন ভিডিও করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের কথার জালে আটকে একদিন বাসায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় ডেভেলপার কোম্পানির ওই মালিককে। সেখানে পৌঁছার পর তিন বোন ও তাদের কথিত স্বামীরা মিলে ওই ব্যবসায়ীকে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে। এরপর ওই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠানো হবে এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে— এই ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।

ওই ব্যবসায়ী গত ১৯ সেপ্টেম্বর র‍্যাবের কাছে অভিযোগে করলে তার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক তিন বোনসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৭। বৃহস্পতিবার ( ১ অক্টোবর) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার গোমদণ্ডী ফুলতল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, এদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামি।

তাদের কাছ থেকে প্রতারণার জন্য করা ভিডিওসহ ১০টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করেছে র‍্যাব।

গ্রেপ্তার হওয়া তিন বোন হলেন— বোয়ালখালী থানার গোমদন্ডী ফুলতল জমাদার বাড়ির ফয়েজুল ইসলামের তিন মেয়ে শাকিলা আক্তার (৩১), কাউছার পারভীন শেপু (২৯) এবং ফারজানা আক্তার। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের ভগ্নিপতি বাকলিয়া থানার চাক্তাই এলাকার জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ সানি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের তিন নারীসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের কাছ থেকে প্রতারণার জন্য করা ভিডিওসহ ১০টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে র‍্যাব। গ্রেফতার তিন নারীসহ চার জন তাদের প্রতারণার কথা স্বীকার করে বলেছেন, তারা নানা কৌশলে ধনী ব্যক্তিদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে বাসায় ডেকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!