চট্টগ্রাম-৮ আসনে বাবলু মহাজোটের প্রার্থী হলে কপাল পুড়বে মোছলেমের

মনোনয়ন ফরম নিলেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বাবলুর হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন জাতীয় পার্টির নেতারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, উত্তর জেলা জাপার সদস্য শায়েস্তা খান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারি এয়াকুব হোসেন, উত্তর জেলা জাপার সেক্রেটারি শফিকুল আলম চৌধুরী, উত্তর জেলার সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসাইন, চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য মাহমুদুল করিম, আব্দুর রউফ ও উত্তরের সদস্য রানা মহাজন।

এর আগে ঢাকার পার্টি অফিসে রোববার (১ ডিসেস্বর) বিকেলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় জিয়াউদ্দীন বাবুলকে জাতীয় পার্টির প্রাথী হিসেবে দলীয় সভায় চট্টগ্রাম ৮ আসনের প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছিল।

এ আসনের প্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর মারা যাওয়ার কারণে উপ নির্বাচন হচ্ছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। গত তিন সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক মইন উদ্দীন খান বাদল নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।

জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আমি গত নির্বাচনে রানিং আসন কোতোয়ালী ছেড়ে দিয়েছি মহাজোট নেত্রীর সিদ্ধান্তে। এবার চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে আমাকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। আমি নির্বাচন করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও যেহেতু জোটে আছি। জোটগত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আশা করি মহাজোটগতভাবে এ আসন জাপাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেটা জোটের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে।’

এদিকে উপনির্বাচনে মনোয়ন দৌড়ে অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এবার নৌকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তবে মহাজোটগতভাবে প্রার্থীর প্রশ্ন আসলে তখন কপাল পুড়তে পারে মোছলেম উদ্দীনের। তখন নৌকার সমর্থন যেতে পারে লাঙ্গলের দিকে। যেমনটি সম্প্রতি রংপুরে প্রয়াত এইচ এম এরশাদের আসনে উপ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও শেষ সময়ে জাপার প্রার্থী এরশাদপুত্র সাদকে সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। প্রধামন্ত্রীর স্নেহভাজন জাপার এ নেতা গত দশম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটগতভাবে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আসন কোতোয়ালী-বাকলিয়া থেকে নির্বাচন করে সংসদে গেলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে। জাপা তথা মহাজোটের শীর্ষ ও প্রভাবশালী নেতা হয়েও নিজ আসন কোতোয়ালী তাকে ছাড়তে হয় প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীর পুত্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান নওফেলের কাছে।

সেই নির্বাচনে নওফেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে স্থানও পান। যদিও গত সংসদ নির্বাচনে বাবলুকে কক্সবাজার ১ আসনে (রামু-সদর) মনোনয়ন দিলেও সেখানকার স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের অনুসারীদের ‘কলাগাছা’ মার্কা আন্দোলনের মুখে সেখানেও মনোনয়ন টেকাতে ব্যর্থ হন সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দীন বাবলু। এছাড়া চট্টগ্রাম ৮ আসনের মোহরায় বাবলুর নানার বাড়ি এবং চান্দগাঁও আবাসিকের স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। যদিও তার জন্মস্থান উত্তর রাউজানে।

এসব দিক বিবেচনা করে গত নির্বাচনে তার ত্যাগ ও মহাজোট গঠনে বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাপাকে নির্বাচনে আনতে বাবলুর ভূমিকা থাকা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে থাকায় তিনি এবার চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে মহাজোটের হয়ে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আলোচনা আছে। কেননা, এই আসন থেকে শুধুমাত্র নৌকার মনোনয়ন পেতেই দলীয় ফরম নিয়েছেন ১৪জন। সেখানে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও রয়েছে। সেদিক থেকে দলীয় কোন্দল এড়াতে যদি মহাজোট নেত্রী মহাজোটের অন্যতম শরীক দল জাপাকে আসনটি ছেড়ে দেন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কেননা এর আগের তিন সংসদ নির্বাচনেও মহাজোটের শরীক জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আসনটি। বাদল সেই তিনবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদেও গিয়েছিলেন। জিয়াউদ্দীন বাবলুও আশা করছেন তাকেই মহাজোট নেত্রী সব দিক বিবেচনা করে তাকেই শেষ পর্যন্ত মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেবেন।

মইন উদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত ২০০৮ সাল থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ২৮৫/চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!