চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে তরুণ মুখের উত্থান, অঙ্গীকারে যুগের হাওয়া

তফসিল ঘোষণা না হলেও চট্টগ্রাম নগরে বইছে নির্বাচনী আমেজ। প্রথমবারের মত এবার সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দেয়া হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন চাওয়া বেশিরভাগ নতুন মুখই সাবেক ছাত্রনেতা ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক কর্মী। পুরানো নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন এসব প্রার্থীরা নির্বাচনী অঙ্গীকারের পুরাতন ধ্যানধারণা ভেঙ্গে বলছেন যুগোপযোগী সব অঙ্গীকার। নালা নর্দমা পরিষ্কারের গতানুগতিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাদ দিয়ে তাদের অঙ্গীকারের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, শিক্ষা ও সেবা খাত নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা।

পূর্ব ষোলশহরে ইলিয়াস
৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সাবেক উপ সম্পাদক ও ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন। তুলনামূলকভাবে শিক্ষা খাতে পিছিয়ে থাকা এই ওয়ার্ডে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি প্রযুক্তিখাতে তরুণদের প্রশিক্ষিত করতে তার নির্বাচনী ওয়ার্ডে বেশ কিছু কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে তার। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় বারবার বলছেন আগামীতে তথ্য প্রযুক্তিখাত দেশের আয়ের প্রধান খাতে পরিণত হবে। এসবের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে আমি তৃণমূল থেকে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার স্বপ্ন দেখি। নির্বাচিত হলে এই ওয়ার্ডে বেশ কিছু কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।’

বাগমনিরামে মামুন
১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন। আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সাবেক এই ছাত্রনেতাও কাজ করতে চান মাদকের বিরুদ্ধে। এই এলাকার আবাসিক সোসাইটিগুলোতে খেলার মাঠ তৈরি করে শিশু কিশোরদের ক্রীড়া চর্চার সুযোগ করে দিয়ে মাদক থেকে দূরে সরানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ পাইয়ে দেয়ার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিনের সিদ্ধান্তকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তিনি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘নেতার নির্দেশে এলাকায় অনেক দিন আগ থেকেই কাজ করছি। আমার এলাকায় অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে দেখি, যারা রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে। এদের হাতে আমি পেপারের বদলে বই তুলে দিতে চাই। পাশাপাশি তরুণদের খেলার মাঠ তৈরি করে দেওয়াকেও আমি বিশেষ গুরুত্ব দেবো। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আমি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের মনোনয়ন চাইবো।’

চান্দগাঁওয়ে কচি-দেবাশীষ
৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও মহানগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইয়াসির আরাফাত কচি। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত চান্দগাঁও গড়ার স্বপ্ন দেখেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের এই বেসরকারি কারা পরিদর্শক। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে কচি বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোটের দুঃশাসনের সময় চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। ওয়ান ইলেভেনেও আমরা রাজপথে ছিলাম। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দলের সমর্থন চাইবো।’

চান্দগাঁও ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য দেবাশীষ আচার্য্যও।
চান্দগাঁও থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির চট্টগ্রাম শাখার সদস্য হিসেবে কাজ করা দেবাশীষের একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এখানকার সব শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে। নির্বাচিত হলে এই ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। আইটি খাতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরি করতে রয়েছে নানামুখী পরিকল্পনা। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে রাজনীতি, সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক নানা সংগঠনের সাথে কাজ করছি। সার্বজনীনভাবে ভোটারদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে। নির্বাচনে দলের সমর্থন চাইবো। জনগণকে সাথে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবো।’

আগ্রাবাদে জাহেদ
২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন মহানগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জয়নাল উদ্দিন জাহেদ। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি— এমনটি জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসা এই ছাত্রনেতা জলাবদ্ধতার পাশাপাশি মাদককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার কথা বলছেন। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এলাকার ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়েছি আমি। এখানে আগের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামের ৩ টি নির্বাচনে আমি কাজ করেছি। তাছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে স্থানীয় জনগণ ও সামজিক সংগঠনগুলোর সাথে আমার ভাল যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভাইয়ের নির্দেশে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের মনোনয়ন চাইবো। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো। জয়ী হলে জলবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি শতভাগ মাদকমুক্ত ওয়ার্ড করতে কাজ করবো আমি।’

উত্তর পাহাড়তলীতে নুরুল আলম
৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক নুরুল আলম মিয়া। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় নানা সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। প্রতি বছর তার উদ্যোগে দুই তিন শত গরীব অসহায় শিশুর খৎনা করানো হয় এই এলাকায়। এছাড়া এলাকার গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা দেওয়ার জন্যও বিশেষ সুনাম রয়েছে তার। এলাকার স্কুল ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে সরব থাকা এই নেতাও দলের সমর্থন চাইবেন আগামী সিটি নির্বাচনে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। আমার বিরুদ্ধে এলাকায় কোন ভূমিদস্যুতার অভিযোগ নেই। কোন অন্যায় অনিয়মের অভিযোগ নেই। সামাজিকভাবেও একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। এখনো ক্ষুদ্র পরিসরে মানুষের সেবা করছি। আরও বড় পরিসরে জনসেবা করতে আগামী নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন চাইবো।’

উত্তর হালিশহরে রনি
২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন মহানগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রেজাউল আলম রনি। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে অবস্থান করা এই ওয়ার্ডে বিশেষ পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করার স্বপ্ন রয়েছে তার। পাশাপাশি নির্বাচনী ওয়ার্ডের সরু রাস্তাগুলোকে প্রশস্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক অভিভাবক আ জ ম নাছির উদ্দিন গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি চট্টগ্রাম বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডটি সমুদ্রের তীর ঘেষে অবস্থান করছে। এখানে পরিকল্পিত স্থাপনা করে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে আমার। নির্বাচনে দলের সমর্থন চাইবো। আমার নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!