চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশ না নিতে ষড়যন্ত্র করছে প্রশাসন, দাবি বিএনপির

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য এখন থেকে প্রশাসন নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করে নেতা কর্মীদের যদি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলেও হুমকি এসেছে দলটির চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. শাহদাত হোসেনের কাছ থেকে।

শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযাগ করেন।

নগর বিএনপির সভাপতি বলেন, ‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আবারও ষড়যন্ত্রমূলক অপ তৎপরতা শুরু করেছে। তথাকথিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে যেভাবে গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা আবারও গ্রেপ্তার নির্যাতন শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে দায়ের হওয়া গায়েবী মামলায় নেতাকর্মীরা হাইকোর্টের জামিনে থাকলেও নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, বিএনপির বলিষ্ঠ নেতাকর্মীরা যাতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাজ করতে না পারে সে জন্য তারা এই গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। এইভাবে নেতা কর্মীদের যদি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। তাই আমরা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভোগি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ করব, জনবান্ধব পুলিশ হউন, কোন গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষাকারী পেটুয়া বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত হবেন না। আমরা ছাত্রদল নেতা কর্মকমীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত ২ বছর ধরে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিএনপি ও বিরুধীমত ধমন করার জন্য সরকার বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, গুম, খুন, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন এখনো অব্যাহত রেখেছে। শত জুলুম নির্যাতন শত্তেও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ স্থানীয় সরকার ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে আসছে। কিন্তু প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের একপেশে ভূমিকার কারনে এই নির্বাচন গুলো সহিংসতাপুর্ণ ও প্রহসনের নির্বাচনে পরিনত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রার্থীদের উপর বল প্রয়োগ করে প্রশ্নবিদ্ধ ও ক্রটিপুণ এইসব নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরী করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে বিজয়ী করার কমিশনে পরিনত হয়েছে। বিরোধী মত দমনে আওয়ামীলীগ এখন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের যে বিষয়টি অবহিত করতে চাই তা হচ্ছে, গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সফররত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নাছিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের তৃনমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল থেকে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচী চলাকালে কোতোয়ালী থানা ও ডিবি পুলিশ বিনা কারণে কার্যালয়ে ঢুকে নেতাকর্মীদের উপর বর্বর হামলা চালায়। এতে পুলিশ মারমুখি হয়ে নেতা কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং গুলি চালায়। এসময় পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। যা শিষ্টাচার বহির্ভূত ।’

ডা. শাহাদাত বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মাইনুদ্দীন শহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ. এম. রাশেদ খান, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কে. এম আব্বাস ও গাজী শওকত সহ ১০/ ১২ জন নেতা কর্মীসহ আহত হয়। তাদেরকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আলম সর্দ্দার, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দীন নিলয়, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদল নেতা ইব্রাহিম খলিল ও বেলালকে গ্রেপ্তার করে।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠন দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটাধিকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছ।কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইউনিটে ছাত্রদল নেতাদের সাথে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ সম্পূর্ণ বিনা কারণে ছাত্রদল নেতাদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে আবার তাদের নামে ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতার মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ওই সময়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন গণ মাধ্যমে স্বীকার করেন পুলিশ চার রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। অথচ পরের দিন ছাত্রদল নেতা কর্মীরা পুলিশকে ককটেল হামলা করেছে অভিযোগ এনে ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল না এমন নেতাদের নামও মামলায় আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ চূড়ান্ত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পদোন্নতির আশায় ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে এবং গণমাধ্যমে তা প্রচার করে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’

বক্তব্য দেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, যুগ্মসম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, আর. ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।

এডি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!