চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির চমক এরশাদ উল্লাহ!

নির্বাচন নিয়ে যতই প্রশ্ন তোলা হোক— আগামী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত। ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে নগরপিতার আসনে বসাতে কাকে ভোটের মাঠে নামাচ্ছেন সেটাও প্রায় চূড়ান্ত বিএনপির।

তবে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে প্রার্থীর নাম প্রকাশ না করা হলেও দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ব্যবসায়ী নেতা এরশাদ উল্লাহকেই মেয়র পদে মনোনীত করতে যাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে দলের একটা অংশ চাইছেন নগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান হাল ধরুক নগরের।

দলীয় সূত্রের দাবি, চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপনির্বাচনে কারচুপির পর ইভিএমের জালিয়াতি সবার কাছে পরিষ্কার। এখন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে চসিক নির্বাচনে দল অংশ নেবে কিনা। তারপর চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম প্রকাশ করবে হাইকমান্ড।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পছন্দের শীর্ষে ছিলেন আসলাম চৌধুরী। আসলাম চৌধুরী দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক। তিনি নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। ভারত সফরে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট নিয়ে বৈঠক করায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় তিনি আপাতত জামিন পাচ্ছেন না।

দ্বিতীয় পছন্দে ছিলেন আবু সুফিয়ান। সুফিয়ান এক বছরে দুটি নির্বাচন করেছেন। এই অবস্থায় তিনি মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহী নন। তাছাড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সম্মেলন প্রস্তুতি সারতে হবে দ্রুত। উপনির্বাচনের কারণে সেই প্রক্রিয়াও কিছুটা পিছিয়ে গেছে। নগরে তাকে ব্যস্ত করলে দক্ষিণ জেলা আরও পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছে দলের হাইকমান্ড।

এরপর নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম মেয়র পদে জোর আলোচনায় থাকলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ তারেক রহমান। এছাড়াও নগর বিএনপির দায়িত্বে থেকে নিজেরে মেয়াদে মূল দলের শত শত নেতাকে দলীয় পদের পরিচয় দেওয়ার ব্যর্থতা, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে তিক্ততা, ছাত্রদলকে অকার্যকর ও নেতৃত্বশূন্য করা ছাড়াও দলের সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন করার বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি পেরিয়ে পৌঁছেছে লন্ডনও।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তিনিই নির্বাচন করবেন। মনোনয়ন চাইবেন সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করও— তার ঘনিষ্ঠ সূত্র এমনটিই জানিয়েছে।

যারা চাইছেন এরশাদ উল্লাহ দলীয় প্রার্থী হোক তাদের অভিমত হলো, এরশাদ উল্লাহ দীর্ঘদিন দলের কোন পদে না থাকলেও দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সর্বশেষ উপনির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছেন। মনোনয়ন না পেলেও তিনি দলীয় প্রার্থী আবু সুফিয়ানের হয়ে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। এসব কিছু বিবেচনায় চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে এরশাদ উল্লাহর নাম চূড়ান্ত তালিকায় আসতে পারে বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

এ প্রসঙ্গে এরশাদ উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমি মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন পেলে সবাইকে সাথে নিয়ে মাঠে নামবো। মনোনয়ন না পেয়েও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে রাত দিন কাজ করেছি। দলের পদ-পদবি নয়, আমার কাছে শহীদ জিয়ার আদর্শই বড়।’

অন্যদিকে দলের একটি অংশ চাইছেন বিএনপির প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানকে মেয়র পদে প্রার্থী করা হোক। সেই প্রসঙ্গে দৃটি আকর্ষণ করা হলে আব্দুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি নির্বাচন নিয়ে এখনো চিন্তা করিনি। যেহেতু বিএনপি গণমানুষের দল, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এলে মুহূর্তে তা বাস্তবায়ন সম্ভব। নেতাকর্মীরা চাইছেন আমি নির্বাচন করি। দল কী সিদ্ধান্ত দিচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করছে আমি প্রার্থী হবো কি হবো না।’

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। প্রার্থীও এক জনের বিকল্প আরেকজন অর্থাৎ দুজন মোটামুটি ঠিক করা আছে। লন্ডন থেকে সবুজ সংকেত পেলে ঘোষণা দেওয়া হবে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!