চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪৮ লাখ টাকার ওষুধ গিলে কামড়াচ্ছে এডিস মশা

চট্টগ্রাম মেডিকেল, মা ও শিশু হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা

চট্টগ্রামে থামছেই না মশার উৎপাত। ৪৮ লাখ টাকা খরচ করে সিটি কর্পোরেশন নগরীতে ওষুধ ছেটালেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না এডিস মশার আক্রমণ। দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষকের পরামর্শে ‘মসকুবান’ নামের এক ধরনের মশা মারার ওষুধ ছেটালেও তেমন কাজে আসছে না।

জনসাধারণের অভিযোগ, একদিন মশার ওষুধ ছেটানোর পর আর খোঁজ থাকে না। যেসব ওষুধ ছেটানো হচ্ছে তাতেও মশা মরছে না। শুধুমাত্র ওষুধ ছিটিয়েই দায় সারছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে প্রাণ গেছে ২৪ জনের । সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

নগরীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড এখন ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা৷ এতে করে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।

এদিকে এডিস মশার লার্ভার ধ্বংসের জন্য চবি গবেষণা দলের পরামর্শে ‘মসকুবান’ নামের একটি ওষুধ ছিটিয়ে সিটি কর্পোরেশন সুফল পাচ্ছে দাবি করলেও নগরীতে এর উল্টো চিত্র। বরং দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তিথি সরকার বলেন, ‘সন্ধ্যা নামলেই টেবিলের নিচে মশার রাজত্ব শুরু হয়। মশার উৎপাতের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে। সেইসঙ্গে ডেঙ্গু আতঙ্কতো আছেই।’

তিথির মা পূজা সরকার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সবসময় আতঙ্কে থাকি। মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের তেমন কার্যক্রম নেই।’

দেওয়ানহাট এলাকার বাসিন্দা সুমন বলেন, ‘মশার কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে রক্ষা মেলে না। আশপাশের নালাগুলো পরিষ্কার করা হয় না, যার কারণে মশা আরও বেশি।’

আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা রনি বলেন, ‘মশার উপদ্রব বেড়েছে, সিটি কর্পোরেশন যেসব মশার ওষুধ ছেটাচ্ছে তাতে যদি মশা মরে তাহলে ডেঙ্গু কেন থামছে না। আমাদের বিল্ডিংয়ে এখনও পর্যন্ত দু’জনের ডেঙ্গু হয়েছে।’

এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবুল হাশেম বলেন, ‘গত দু’মাসে ৪৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে মশার ওষুধ ছেটানোর কার্যক্রমে। বর্তমানে এডিসের লার্ভা ধ্বংসের জন্য আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলের পরামর্শে ‘মসকুবান’ নামে নতুন একটা ওষুধ ছিটাচ্ছি, তা কার্যকরী বলে মনে হচ্ছে। যেখানে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত, সেখানে এটি ছিটিয়েছি আমরা। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে ছিটিয়েছি, যেখানে এক পরিবারের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া খুলশী, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী এলাকায় আমরা এটি ছিটিয়েছি এবং ভালো ফলাফল পাচ্ছি।’

মশার ওষুধ ছেটানোর কাজ চললেও মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গু কেন বাড়ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হাশেম বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি । আবহাওয়াগত কারণে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে পাঁচজন করে স্প্রেম্যান এবং ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছি। শুধু পাঁচ হাজার লিটার ন্যাপথা কিনেছি আমরা নতুন ওষুধ মসকুবান ছেটানোর জন্য।’

আবুল হাশেম আরও বলেন, ‘আমাদের ১৫০ জনের একটা বিশেষ দল আছে। আগে আমাদের জনবল ছিল ১২৪ জন এখন তা বাড়িয়ে ২৮০ জনে করা হয়েছে। বর্তমানে যে ওয়ার্ডে তিনজন ছিল, সেখানে পাঁচজন করে দিয়েছি। আবার যেসব ওয়ার্ডে পাঁচজন ছিল, সেখানে লোকসংখ্যা বাড়িয়ে আটজন করে দিয়েছি। গত সপ্তাহে এবং এর আগের সপ্তাহে ১০০টা নতুন স্প্রে মেশিন এবং ২০টা ফগার মেশিন কিনেছিলাম। মেয়র আমাদের আরও ১০০টা স্প্রে মেশিন কিনে দেবেন, এমন আশ্বাস দিয়েছেন ৷ আমাদের জনবল ও প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই৷ আমাদের যে ওষুধ আছে, সেগুলো দিয়ে আগামী তিনমাস পর্যন্ত কাভার করা যাবে। আরও ১৫ হাজার লিটার এডালটিসাইড ও পাঁচ হাজার লিটার লার্ভিসাইড আসবে। এর বাইরে আমরা মসকুবান ছেটাচ্ছি, যেন মশার লার্ভা দ্রুত মারা যায়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!