চট্টগ্রাম সিটির ভোটে ৮ ওয়ার্ড ঘিরে জ্বলছে বিএনপির আশার প্রদীপ

ভোটকেন্দ্র দখলসহ অনিয়মের অভিযোগ এনে গতবারের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল ভোটের দিন দুপুরেই। কিন্তু সেই নির্বাচনেও পাঁচটি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে জয় তুলে নিয়েছিল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। এর প্রায় ৫ বছর পর বিএনপি নেতারা এবার বলছেন, গতবারের নির্বাচনী পরিবেশের চেয়েও অনেক বেশি প্রতিকূলতা দেখা যাচ্ছে এই দফায়। তবে এবারও যেকোন পরিস্থিতিতে ৮-৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জয় তুলে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন দলটির নেতারা। যদিও তাদের দাবি, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে এই সংখ্যা ৩০-এরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপি নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীতে আব্দুস সাত্তার সেলিম, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে ইয়াছিন চৌধুরী আছু, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহরে সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাশেম, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে ইসমাইল বালী, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে নুরুল আবছারের জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী তারা।

এর মধ্যে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন মোহরা ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আজম, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম ডিউক, দক্ষিণ বাকলিয়ায় ইয়াছিন চৌধুরী আছু, উত্তর হালিশহরে আবুল হাশেম এবং পাথরঘাটা ওয়ার্ডের ইসমাইল বালী।

৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খানকে এবারও দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি মো. ইলিয়াছকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশাপাশি অন্যান্য দল থেকেও বেশ কয়েকজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের ঘরের বিরোধ এখানে বিএনপি প্রার্থীকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। ফলে ইলিয়াছ এবার বেশ আশাবাদী জয়ের ব্যাপারে।

৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির সদ্য সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম। বিএনপি নেতাকর্মী অধ্যুষিত এই এলাকায় স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবও রয়েছে তার। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এখানে তুলনামূলক দুর্বল। ফলে আজমের জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নির্ভার এখানকার নেতাকর্মীরা।

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীতে বিএনপির প্রার্থী আব্দুস সাত্তার সেলিম। এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তিনি। এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আবছার মিয়া। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম। জসিম নির্বাচনে থাকলে শেষ পর্যন্ত এর সুফল ঘরে তোলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বিএনপির আব্দুস সাত্তার সেলিমের।

‘বিএনপির দূর্গ’ হিসেবে পরিচিত বাকলিয়ার ৪ ওয়ার্ডের মধ্যে কেবলমাত্র ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে প্রচার প্রচারণায় বেশ সরব দেখা যাচ্ছে। এই ওয়ার্ডে আগের দুই নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি জাফরুল ইসলাম। পরে তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হন তার ছেলে একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক। এবারও তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির দূর্গে ভরসার শেষ খুঁটি হিসেবেই তাকে দেখছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন বিএনপির ইয়াছিন চৌধুরী আছু। এবারেও তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এই ওয়ার্ডে আবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন বিএনপি প্রার্থী আছুর ভাই নুরুল আলম। শুরুতে এখানে প্রচার-প্রচারণা না করলেও গত ২ দিন ধরে আছুকে আবারও প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। আছুকে ফের নির্বাচনী মাঠে পেয়ে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে এখানকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলে আছুর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

২৬ নম্বর উত্তর হালিশহরে বিএনপির প্রার্থী সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাশেম। এই ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন ও লায়ন ইলিয়াসের দ্বন্দ্বের সুবিধা কাজে লাগিয়ে জয় ঘরে তুলেছিলেন তিনি। এবারে এই ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে স্থানীয় সাংসদ আফসারুল আমিনের ঘনিষ্ঠরা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী লায়ন ইলিয়াসের পক্ষে। ফলে এবারেও একই ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এই ওয়ার্ডে।

৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল বালী। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলক খাস্তগীর। এখানে এবারেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বালীরই।

৪১ দক্ষিণ পতেঙ্গায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী। তার বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ডা. নুরুল আবছার। এই ওয়ার্ডে এবার তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে ছালেহ আহমদকে। অন্যদিকে নুরুল আবছার আছেন অনেকটা নির্ভার। এখানে নির্বাচনে জয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে তার। প্রচার প্রচারণায় নিজের জয়ের সম্ভাবনার কথা বেশ ভালই জানানও দিয়েছেন তিনি।

তবে নির্বাচন নিয়ে এখনও শঙ্কার মধ্যে আছেন মন্তব্য করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কমপক্ষে ৩০টি ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থীরা জিতবে। কিন্তু নির্বাচনী পরিবেশ কী— তা সকলেই দেখছে৷ প্রতিদিন মামলা হচ্ছে, হামলা হচ্ছে। তবু এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি, তাতে করে অনেক জায়গায় আমাদের প্রার্থীরা এগিয়ে আছে। কিন্তু এসব হিসেব করে তো লাভ নাই।’

নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের মো. আজম বলেন, ‘আমাদের এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভাল। টুকটাক সমস্যা হচ্ছে। তবে গত ৩-৪ দিন ধরে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা বিপুল ভোটে জিতবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!