চট্টগ্রাম সিটির প্রশাসক কে হচ্ছেন— শর্টলিস্টে দুজন, চমক হতে পারে তৃতীয় একজন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না এবং চলতি পরিষদের মেয়াদ শেষে প্রশাসকের হাতেই যাচ্ছে চসিক পরিচালনার ভার— এমন সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। এখন নগরের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসক নিয়োগকে ঘিরে। কে হবেন চসিকের নতুন প্রশাসক?

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, চসিকের প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। শেষ পর্যন্ত কি প্রধানমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা এখনো কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও এই বিষয়ে নগরের রাজনীতিতে ছড়িয়েছে জল্পনা-কল্পনার ডালপালা।

চসিক প্রশাসক পদে আবারও মেয়র নাছিরকেই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, কেউ কেউ মৃদু সুরে এমন সম্ভাবনার কথা বললেও শুরুতেই সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন মেয়র নাছিরের ওপর সরকারের উচ্চ মহলের অসন্তোষের চিত্রটি অনেকটাই স্পষ্ট। এক্ষেত্রে নতুন কাউকেই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো। অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিটি কর্পোরেশন আইনে বলা আছে, ‘কোন সিটি কর্পোরেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হইলে, সরকার, সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে।’ তবে চলমান পরিস্থিতিতে চসিকে প্রশাসনের কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার চেয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে নতুন কাউকেই শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। আর এই আলোচনায় ঘুরেফিরেই আসছে নগর আওয়ামী লীগের দুই সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং খোরশেদ আলম সুজনের নাম।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় রাজনীতি ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা থাকা কাউকেই বেছে নেওয়া হতে পারে এই পদে। সে হিসেবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকা এই দুই নেতা সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকছেন অন্যদের চেয়ে।

স্থগিত হওয়া চসিক নির্বাচনে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলকে সদস্য সচিব করা হলেও পরে তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে মেয়র নাছিরকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রবীণ এই নেতাকে প্রশাসক পদে এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে খোরশেদ আলম সুজনের নামও উচ্চারিত হচ্ছে সমানতালে। একাধিকবার মনোনয়ন চেয়েও না পাওয়া, আবার একবার পেয়েও হাতছাড়া করা সুজনকে অন্তত প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে হলেও তার না পাওয়ার আক্ষেপ ঘোচানো হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে এই দুই নেতার মধ্য থেকে একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও একটি সমীকরণের কথাও আলোচনা হচ্ছে বেশ। বলা হচ্ছে চসিক নির্বাচনের পরপরই হতে যাচ্ছে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সেক্ষেত্রে এই দুজনের মধ্যে একজনকে প্রশাসক করে অন্যজনকে নগরের দায়িত্বে আনা হতে পারে। আর এই সমীকরণে ইব্রাহীম হোসেন বাবুলের প্রশাসক হওয়ার পাল্লা ভারী বলেই ইঙ্গিত রাজনৈতিক মহলের।

আগামী ৫ আগস্ট শেষ হতে যাচ্ছে চসিকের চলতি পরিষদের মেয়াদ। মেয়াদের আগে নির্বাচন করার নিয়ম মেনে গত ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনের সব আয়োজন করেও করোনা পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচন স্থগিত করে চসিক। পরে করোনা পরিস্থিতিসহ বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টি ও পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চসিক নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। এ প্রেক্ষিতে মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগ করার কথা জানায় স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!