চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান যখন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক!

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরে যেতে না যেতেই পদটি নিয়ে শুরু হয়েছে রীতিমতো ছেলেখেলা। সর্বশেষ রোববার (২৪ নভেম্বর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাপ্তরিক কাজে ঢাকা গেলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিজেই নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এই পদবি উল্লেখ করে তিনি দাপ্তরিকপত্র পর্যন্ত পাঠিয়েছেন খোদ মন্ত্রণালয়েও। এমন বিস্ময়কর ঘটনা আলোড়ন তুলেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ছাড়াও রাজধানীতে অনুষ্ঠিত আন্তঃবোর্ডের সভায়ও। ওই সভায় অন্য শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা মত দিয়েছেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী বোর্ড চেয়ারম্যান বদলি বা অবসরে গেলে নতুন নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান না আসা পর্যন্ত শিক্ষাবোর্ডের সচিব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে যে কাউকে চলতি দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন। তবে যে কেউ চাইলেই স্বেচ্ছায় কিংবা স্বঘোষিতভাবে চেয়ারম্যান দাবি করা রীতিমতো চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন। আর এমন ঘটনাই ঘটেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম অবসরে যাওয়ার আগে গত ১৯ নভেম্বর চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব সচিব প্রফেসর আবদুল আলীমের কাছে হস্তান্তর করেন। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত তিনিই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল আলীম সরকারি কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় তার দায়িত্ব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দিয়ে না গেলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ নিজ দায়িত্বে ‘চলতি দায়িত্ব’ গ্রহণ করে রীতিমতো মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া কেউ চলতি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না— এমন বিধান থাকলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ নিজেকেই স্বঘোষিত চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) ঘোষণা করে ২৪ নভেম্বর ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ব্যয়ভার নির্বাহের আর্থিক ক্ষমতা প্রদান প্রসঙ্গে’ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠান।

চিঠিতে লেখা আছে, ‘উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলামের পিআরএলজনিত বদলির কারণে নতুন চেয়ারম্যান যোগদান না করা পর্যন্ত বোর্ডের সকল প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়াদি দেখাশোনা করার জন্য অত্রবোর্ডের সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম এর স্বাক্ষরে ব্যয়ভার নির্বাহের আর্থিক ক্ষমতার অনুমতি প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হলো।’

এই চিঠির নিচে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুবল ছাড়াই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ‘চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে স্বাক্ষর দিয়েছেন। যা রীতিমতো নীতিমালা বহির্ভূত।

এমন চিঠি ইস্যু করার কথা জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া শিক্ষাবোর্ডের কোন কর্মকর্তা চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) হতে পারেন না।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সদ্য অবসরে যাওয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে আমি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। অফিসিয়ালি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলাও আমার শোভন না। তবে চলতি দায়িত্ব দিতে হয় বা নিতে পারে একমাত্র মন্ত্রণালয়। সচিবও চাইলে এ দায়িত্ব কাউকে দিতে পারেন না। চলতি দায়িত্বটা যদি মন্ত্রণালয় প্রয়োজন মনে করেন তাহলে যে কাউকে দিতে পারেন। আর এই দায়িত্ব মন্ত্রণালয় থেকেই পেতে হয়।’

দায়িত্ব হস্তান্তর প্রসঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম বলেন, ‘আমি উনাকেই (সচিব) দায়িত্ব হস্তান্তর করে দিয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্টিকেল ৪৭ অনুসারে, আমি অর্পণকারী আর গ্রহণকারী হচ্ছেন সচিব মহোদয়।’

এদিকে নিজে নিজে চেয়ারম্যানের ‘চলতি দায়িত্ব’ নেওয়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘সচিব দায়িত্বে আছেন। উনি ঢাকায়, এখন চলতি দায়িত্বে আমি।’

চলতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘না না এটা মন্ত্রণালয় থেকে আসে নাই। আর সচিব তো ভারপ্রাপ্ত। সচিব ছুটিতে থাকায় আমি।’

চলতি দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলতি দায়িত্ব বলতে টুকটাক কাজটাজ করা আর কি।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সচিব আবদুল আলীম তাকে দিয়েছেন কিনা— এমন প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘ না আমাকে না। উনি ছুটিতে। কালকে চলে আসবে তো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাঁচটি সাধারণ বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃবোর্ডের মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে আন্তঃবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সকল চেয়ারম্যান মত দিয়েছেন এটার কোনো সুযোগই নেই এবং তিনি (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) এটা লিখতেও পারেন না। এতে চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।’

এর সাথে যোগ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘উনাকে (নারায়ণ চন্দ্র নাথ) চলতি দায়িত্ব দিল কে? উনি নিজেই নিলেন কী করে? উনি কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। রুটিন দায়িত্ব আর চেয়ারম্যান পদের চলতি দায়িত্বের মধ্যে বিস্তর ফারাক।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চলতি দায়িত্ব আমার দেওয়ার ক্ষমতা নেই। দিতে পারে শুধু মন্ত্রণালয়। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অন্য কোন সিনিয়র কর্মকর্তা রুটিন দায়িত্বে থাকতে পারেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!