চট্টগ্রাম শহরের ১৩ রুটে গণপরিবহনের অরাজকতায় মানুষের দুর্ভোগ

নির্দিষ্ট কোম্পানিভিত্তিক বাস চালুতেই সমাধান দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

চট্টগ্রাম নগরের গণপরিবহনের রুট সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে একজন মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে একাধিক বাস বদল করতে হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থ, অন্যদিকে অপচয় হচ্ছে মূল্যবান সময়। প্রতিদিনই এতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের রুট সংখ্যা ১৩ থেকে কমিয়ে নির্দিষ্ট কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন চালু করা হলেই কেবল বিশৃঙ্খলা ও যাত্রী হয়রানি কমানো সম্ভব। প্রতিটি রুটে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আলাদা রঙের বাস চালু করা হলে যাত্রীরা যেমন কোন্ রুটের গাড়ি সেটা সহজে বুঝতে পারবে, তেমনি এক রুটের গাড়ি অন্য রুটেও চলাচল করতে পারবে না।

চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে গণপরিবহনের রুট সংখ্যা ১৩টি। এর মধ্যে ১ নম্বর রুটের গাড়ি চলে কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ২ নম্বর রুটের গাড়ি চলে কালুরঘাট ব্রিজ থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। ৩ নম্বর রুটের গাড়ি চলে ফতেয়াবাদ থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১৪.৫ কিলোমিটার। ৪ নম্বর রুটের গাড়ি চলে নিউমার্কেট থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। ৫ নম্বর রুটের গাড়ি চলে নিউমার্কেট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১৮.৬০ কিলোমিটার। ৬ নম্বর রুটের গাড়ি চলে লালদিঘী থেকে সীবিচ পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১৬.৬০ কিলোমিটার। ৭ নম্বর রুটের গাড়ি চলে কোতোয়ালী মোড় থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ১৬.১ কিলোমিটার। ৮ নং রুটের গাড়ি চলে নিউমার্কেট থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ১০ নং রুটের গাড়ি চলে কালুরঘাট থেকে সীবিচ পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। ১১ নং রুটের গাড়ি চলে ভাটিয়ারী থেকে সীবিচ পর্যন্ত। এই রুটের মোট দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার।

চট্টগ্রাম শহরের ১৩ রুটে গণপরিবহনের অরাজকতায় মানুষের দুর্ভোগ 1

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের গণপরিবহনের রুট সংখ্যা ১৩টি হওয়ায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের জন্য একজন যাত্রীকে একাধিক বাস বদল করতে হয়। এতে যাত্রীদের একদিকে যেমন সময়ের অপচয়সহ দুর্ভোগের শিকার হতে হয়, তেমনি তাতে যাত্রীপিছু যাতায়াত খরচও বেড়ে যায়। এছাড়া নগরে চলাচল করা ট্রিপভিত্তিক অতিরিক্ত বাস হয়ে উঠেছে যানজট ও দূর্ঘটনার কারণ। হাত ওঠালেই মাঝ সড়কে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি। গাড়িচালকেরা নিজের ইচ্ছেমত যখনতখন দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। যাত্রী ওঠানামার জন্য গণপরিবহনগুলোর বিপজ্জনক রেষারেষির কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হচ্ছে মানুষ।

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসগুলো রুটের শেষ পর্যন্ত না গিয়ে মাঝপথে ইচ্ছেমত গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়। যেমন ৩ নং রুট পারমিট নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ পর্যন্ত হলেও সন্ধ্যার সময় অক্সিজেনের পর আর যাতায়াত করে না। ফলে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা অফিস শুরু ও ছুটির সময় গণপরিবহন সংকটে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরের গণপরিবহনখাতে এসব বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হল রুটভিত্তিক শ্রমিক সংগঠনের রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে পরিবহন শ্রমিকেরা বেপরোয়া মনোভাব। এভাবে নানা বিশৃঙ্খলার মধ্যেই যুগ যুগ ধরে চলছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম নগরের গণপরিবহন।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের গণপরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা ও যাত্রী হয়রানি দূর করতে হলে রুট সংখ্যা কমিয়ে কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন চলাচলের আওতায় আনতে হবে ৷ এ ক্ষেত্রে রুট সংখ্যা ১৩টি থেকে কমিয়ে ৩-৪টি নির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে চলাচল করলে যাত্রী হয়রানি দূর করা সম্ভব। প্রতিটি রুটে লাল, নীল, হলুদ ও সবুজ আলাদা রঙের বাস চলাচল করবে। এতে যাত্রীরা যেমন কোন্ রুটের গাড়ি তা সহজে বুঝতে পারবেন, তেমনি এক রুটের গাড়ি অন্য রুটে চলাচল করতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রী ওঠানামার জন্য স্টপেজ নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট সময় পর পর বাস স্টপেজ ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে এতে বাসের গতি বেড়ে যাত্রী পরিবহনে আগের চেয়ে বাস সংখ্যা কম লাগবে। এতে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত পরিবহন খরচ, যানজট ও দুর্ঘটনা কমে আসবে। ফলে গণপরিবহন খাতে একটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। এছাড়া রুটভিত্তিক শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব কমে যাওয়ার ফলে পরিবহন মালিকদের নানা ধরনের চাঁদা দেওয়া থেকে রেহাই মিলে। এতে যানবাহনের খরচও কমে আসবে৷

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, চট্টগ্রামের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন চলাচল জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কোনো একটি রুটে পরীক্ষামুলক এ ধরনের পরিবহন চালু করা যেতে পারে৷ পরে পর্যায়ক্রমে পুরো নগরে কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন চালু করা যেতে পারে৷

চট্টলা বাস-মিনিবাস হিউম্যান হলার মালিক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রসুল বলেন, ‘আমরা সবসময় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর পক্ষে। যদি রুট সংখ্যা কমিয়ে কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন চালু করে এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। এক্ষেত্রে পুরাতন বাসগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন বাস নামানো দরকার।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!