চট্টগ্রাম রেলে শোধনাগারের পানিতেই শ্যাওলা, পানি কিনতে হয় টাকা দিয়ে

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীতে রেলওয়ের অধিকাংশ সরকারি কলোনিতে পানি সরবরাহ করা হয় ফয়’স লেক থেকে। প্রথমে সেই পানি লেক থেকে উত্তোলন করে ওষুধের মাধ্যমে শোধন করে তারপর বাসা-বাড়িগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এই শোধনের কাজটি করে থাকে টিপিপি কলোনিতে অবস্থিত রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) এর অধীনে উপসহকারী প্রকৌশল দপ্তর (পানি)।

কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে সেই পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি পানির সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে শ্যাওলাও। দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফেলতি ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, ফয়’স লেক থেকে পানি উত্তোলন করে শোধনের পর তা নগরীর পাহাড়তলীর রেলওয়ে মাস্টার লেন, পাঞ্জাবি লেন, সেগুন বাগান, লোকো কলোনি, এক্সইএন কলোনি, ঝাউতলা, ওয়ালেস কলোনি, টিপিপি কলোনিসহ আরো কয়েকটি এলাকায় সরবরাহ করা হয়। আর এই পানি ব্যবহার করে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। কিন্তু কলোনির বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানির বদলে বিষ ব্যবহার করছেন। এতে পেটের অসুখসহ পানিবাহিত নানান অসুখে ভুগতে হচ্ছে তাদের।

আরও জানা যায়, এই শোধনাগারে ৭টি ফিল্টার স্তর রয়েছে। লেক থেকে পানি জমা হলে এরপর ওষুধ দিয়ে পানি শোধন করা হয়। কিন্তু পানি বিশুদ্ধ করার ওষুধ সরবরাহ না থাকায় এসব পানি শোধন না করেই সরবরাহ করা হচ্ছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১১ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ইউএসটিসি হসপিটালের পাশে অবস্থিত রেলের পানি শোধনাগারটির (ফিল্টার) পানিতে শ্যাওলা ভাসছে। পানি অনেকটা নোংরা এবং দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আর ৭ স্তরের ফিল্টার বেডের তিনটিই দেখা গেছে অপরিষ্কার।

তবে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, এই লেকের পানি পরিষ্কার না করার পেছনে আরেক কারণ হচ্ছে— জমজমাট পানি ব্যবসা। কিছু লোক রেলের জায়গা থেকে মটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে তা বিভিন্ন বাসায় টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। শোধনাগার থেকে যে পানি আসে তা গন্ধযুক্ত ও ময়লা। তাই বাধ্য হয়ে বাসিন্দাদের পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। বলতে গেলে এদের হাতে জিম্মি রেলের কর্মজীবীরা।

পানি বিশুদ্ধকরণের ওষুধ নেই জানিয়ে রেলের শোধনাগারের দায়িত্বে থাকা অস্থায়ী কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পানি শোধনের জন্য ব্যবহার করা হয় ফিটকারি ও চুন, যা এখানে নেই। মেডিসিনও শেষ তাই পরিষ্কার করা হয়নি।

মেডিসিন প্রয়োগ না করে এই পানি কীভাবে সরবরাহ হচ্ছে— এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সাইফুল ইসলাম।

এছাড়া পানি শোধনের জন্য পাঁচজন অস্থায়ী লোক নিয়োগ দেওয়া হলেও সাইফুল ছাড়া আর কারও দেখা মেলেনি।

জানতে চাইলে রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিয়মিত পানি শোধনাগার তদারকি করি। অভিযোগ পেলে দ্রুত তা সমাধান করে দিয়ে আসি। টাকা গ্রহণ করে সেবাদানের বিষয়টি সঠিক নয়।’

পানি শোধন না করে সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!