চট্টগ্রাম রেলে পছন্দের ঠিকাদাররাই পায় কাজ, মেরামতকাজের বেহাল দশা

রেললাইনে পাথর-স্লিপার না থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রতিবছর শত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

কুমিল্লায় রেললাইনে পাথর, স্লিপার না থাকায় সম্প্রতি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি মালবাহী ট্রেন। এছাড়া পূর্বাঞ্চলের ২৬টি স্টেশন নতুন করে মেরামতকাজ পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশল বিভাগে কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আর এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ঠিকাদাররা দুদকের মাধ্যমে তদন্তের দাবি তুলেছেন।

গত ৯ মে রাত ৩টা ৪ মিনিটে চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াই হতে ঢাকাগামী মালবাহী ট্রেনের ২টি বগি কুমিল্লার রাজাপুর স্টেশনের অদূরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রেললাইনে পাথর ও স্লিপার না থাকার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। তবে এ ঘটনার দায় গার্ডদের ওপর চাপানো চেষ্টা করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মালবাহী ট্রেনের ২টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন ট্রেনের গার্ড ওমর ফারুক।

জানা যায়, এপিপির কথা বলে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে জরুরি কাজের নামে দায়সারাভাবে কাজ করে বরাদ্দ অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পছন্দের ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রকৌশল বিভাগের কিছু কর্মকর্তা অর্থের ভাগ-বাটোয়ারাও করে নিচ্ছেন।

কয়েকজন সাধারণ ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর রেলকে লাইসেন্সের বিপরীতে ফি প্রদান করলেও সাধারণ ঠিকাদাররা কাজ পায় না। প্রধান প্রকৌশলীসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে কিছু ঠিকাদার অগ্রিম কাজ বাগিয়ে নেয়। জরুরি কাজ দেখিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে ওই কাজ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে পূর্বাঞ্চলের ২৬টি রেল স্টেশন আধুনিকায়নের নামে পছন্দের ঠিকাদারদের টেন্ডারের আগে মৌখিক নির্দেশে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

এছাড়া রেলের ব্রিজ, কালভার্ট, ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে করিয়ে নেন প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।

তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এবার বাজেট কম দেওয়ায় উন্নয়নকাজ তেমন দৃশ্যমান হয়নি।

পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) আব্দুল হানিফ রেললাইনে পাথর ও স্লিপার না থাকার কারণে মালবাহী বগি লাইনচ্যুতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিয়মিত তদারকি করি।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্র্যাক সাপ্লাই কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, আমার দায়িত্ব রেললাইনের স্লিপার দেওয়া, পাথর দেওয়া না। মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টিও আমি জানি না।’

প্রকৌশল দপ্তরের ট্র্যাক সাপ্লাইয়ে চলতি অর্থ বছরে ২৯ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেয় বলে জানান তিনি। কিন্তু বরাদ্দের পরও রেললাইনে স্লিপার কেন নেই জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি হামিদুর রহমান।

এদিকে বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) আব্দুল হানিফকে গত ২০২০- ২১ অর্থ বছরে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২১-২২ চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

রেললাইনে পাথর সাপ্লাইয়ের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) আবু জাফর মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি দায় এড়িয়ে যান।

৩ মাসেই বেহাল দশা রাস্তার

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী স্কুলের সামনে রাস্তা প্রশস্থ ও কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু তিন মাস যেতেই বেহাল দশা রাস্তার। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় রাস্তার বিভিন্ন জায়গা থেকে কার্পেটিং উঠে গেছে।

এদিকে চলতি ২০২১-২২ এবং গত ২০২০-২১ অর্থ বছর কত টাকা বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ জানাতে রাজি হননি পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগকে বাজেট দেওয়া হয় ২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৯- ২০ অর্থ বছরে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) মো. রফিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোন এসএমএস দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়ার কাছে উন্নয়নে বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ (২১ ও ২২ অর্থ বছর) কত টাকা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন, এ বিষয়ে জানি না।’

এদিকে সাধারণ ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে পছন্দের ঠিকাদার অগ্রিম কাজ দেওয়া বিষয়ে জানতে দপ্তরে গেলে মিটিং অজুহাতে সাক্ষাৎ করেননি তিনি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!