চট্টগ্রাম রেলের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বন্ধ ফার্নেস অয়েলের অভাবে, লাইনে নিম্নমানের স্লিপার

স্লিপারে দেওয়া হচ্ছে না ট্রিটমেন্ট, বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও ঢাকার রেললাইনে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের কাঠ ও নিম্নমানের সিমেন্ট দিয়ে বানানো স্লিপার। সেইসঙ্গে এসব স্লিপারে দেওয়া হচ্ছে না তেল। ফলে গরমের প্রভাবে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ফার্নেস অয়েল সরবরাহ না থাকায় বন্ধ রয়েছে স্লিপার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ফলে নিম্নমানের তেল দিয়েই যেনতেনভাবে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে কাঠের স্লিপারগুলোতে। এতে অতিরিক্ত গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।

এসব অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কিছু অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায়ও রেললাইন বাঁকা হওয়ার কথা না। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে এমনটা হচ্ছে।

চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ ১৫ দিনে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে দুটি আন্তঃনগরসহ তিন ট্রেন দুর্ঘটনা শিকার হয়েছে।

গত ২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দাড়িয়াপুরে রেললাইন বেঁকে চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী মালবাহী ট্রেনের ৭ কন্টেইনার লাইনচ্যুত হয়। একই স্থানে গত ২৯ এপ্রিল গরমে বেঁকে যায় রেললাইন। ওই সময় রেললাইন বন্ধ করে দ্রুত মেরামত কাজ করে ঠিক করা হয়।

এছাড়া গত ১৫ এপ্রিল ও ১৬ এপ্রিল কুমিল্লার লাঙ্গলকোট ও হাসানপুরে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন। এরমধ্যে ১৫ এপ্রিল রাত ২টা ৪৫মিনিটে চট্টগ্রাম বিভাগে ফেনী হতে লাকসাম স্টেশনে চট্টগ্রামমুখি মহানগর এক্সপ্রেস লাঙ্গলকোট স্টেশনে এলে ইঞ্জিনের চাকা লাইন থেকে পড়ে যায়। পরদিন ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা ৪৩মিনিটে একই স্টেশনে ঢাকামুখি সোনার বাংলা এক্সপ্রেস হাসানপুর মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে ইঞ্জিনসহ সাতটি কোচ লাইনচ্যুত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, অসাধু ঠিকাদার ও রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ট্রিটমেন্ট ছাড়া কাঠের স্লিপার, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সিমেন্টের স্লিপার রেললাইনে বসিয়ে কোটি কোটি টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম রেলওয়ের এক সহকারী প্রকৌশলী জানান, নিম্নমানের কাঠের স্লিপার ব্যবহার করা হয় রেললাইনে। এছাড়া সিমেন্ট দিয়ে যেসব স্লিপার তৈরি করা হয় তাতেও ব্যবহার হয় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী। এছাড়া কাঠের স্লিপারগুলো ঠিকভাবে ট্রিটমেন্ট পায় না।

চট্টগ্রাম ট্রাক সাপ্লাই কর্মকর্তা (পূর্ব) আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। তবে ফার্নেস অয়েলের অভাবে দীর্ঘদিন ট্রিটমেন্ট প্লানটি বন্ধ। আর নিম্নমানের স্লিপার ব্যবহার বিষয়ে আমি খোঁজ নেবো।’

ফার্নেস অয়েল সরবরাহ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘দ্রুত ফার্নেস অয়েল কিনতে ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘রেললাইনে স্লিপার পুরাতন হয়ে ভেঙে যাওয়ায় রেললাইন বেঁকে গেছে বলে আমি মনে করি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!