দেশে এই প্রথম/ চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও ডিজিটাল কাউন্টার

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে শিশুদের মাতৃদুগ্ধপানের জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও ডিজিটাল কাউন্টার কার্যক্রম শুরু করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। এ উদ্যোগটি দেশের সবকটি রেলস্টেশনের মধ্যে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। এর মাধ্যমে ট্রেনযাত্রী মায়েরা তাদের শিশুদের নিরাপদে দুগ্ধপানের পাশাপাশি বিশ্রামও নিতে পারবেন।

এছাড়া চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রেলওয়ের আশপাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা বন্ধ, গবাদিপশু অবাধ বিচরণ, রেলওয়ে পাশে অযাচিত লোকজনের চলাফেরা, মোবাইলে সেলফি তোলা ও ফোনে কথা বলা বন্ধ করতে মাসব্যাপী লিফলেট ও মাইকিং করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে।

রেলে প্রায়ই অযাচিত দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। রেলওয়ে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে চলন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০৩ জনের। এদের মধ্যে ২৩৮ জন পুরুষ ও ৬৫ জন নারী। গত বছর মৃত্যু হয়েছে ৮১২ জনের। এসব অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার পেছনে জনসাধরণের অসচেনতাকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেছে রেলওয়ে পুলিশ। সর্বশেষ ১৫ জুন সন্ধ্যায় রাজধানী বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাশে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী একটি চলন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে রতন মিয়া (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।

এদিকে যাত্রীসেবা নিশ্চিত, রেলের বেহাত হওয়া জায়গা উদ্ধার, রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ধারাবাহিকভাবে এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ের উদ্যোগে গত ১৮ জুন নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো এ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানায়, বাংলাদেশকে রেলওয়েকে একটি জনকল্যাণমূলক ও আর্থিক লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে গত ১১ জুন থেকে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচিকে সফল করতে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদ্বয় এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার ও শিশুদের জন্য চালু করা হবে মাদারচাইল্ড ডে-কেয়ার বিশ্রামাগার। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও যাত্রীরা এ সেবার আওতায় থাকবেন। এছাড়া রেলযাত্রীদের জন্য ১৮ জুন থেকে চালু হয়েছে নতুন কাউন্টারসহ ৩৬ ইঞ্চি বর্গফুটের দুটি কক্ষবিশিষ্ট ব্রেস্টফিডিং কর্নার। পৃথকভাবে এসি ও নন-এসির যাত্রীরা এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে শিশুদের মাতৃদুগ্ধপানের জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্নার
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে শিশুদের মাতৃদুগ্ধপানের জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্নার

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূবাঞ্চলের বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) ইঞ্জিনিয়ার মো. বোরহান উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চলন্ত ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, অযাচিত দুর্ঘটনা এড়ানো এবং রেলওয়ের রাজস্ব আরো বাড়াতেই জনসচেতনমূলক এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ কর্মসূচির ফলে অপরাধ প্রবণতা, রেলের পাশে গজিয়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা বন্ধ, বিনাটিকিটে ভ্রমণ, মোবাইলে ফোনে সেলফি তোলার প্রবণতা এবং নেশাগ্রস্থ ও ভবঘুরের উপদ্রব কমে আসবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, এ কর্মসূচিকে ধারাবাহিকভাবে পালন করা হবে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকাগুলোতেও।

জিআরপি থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, রেলওয়ের এ উদ্যোগের ফলে রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এবং মোবাইলে সেলফি তোলাসহ নানান অযাচিত দুর্ঘটনা কমবে। এ ছাড়া রেলস্টেশনে কালোবাজারি, অজ্ঞান ও মলম পার্টি, পকেটমার, নেশাগ্রস্থ ও ছিনতাইকারীদের আনাগোনা কমে আসবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!