চট্টগ্রাম রুটে পথের মাঝে ৩ মাসে ২৪ বার ট্রেন বিকল!

যাত্রাপথে বাড়ছে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন প্রায় ৩২৩ কোটি টাকায় কেনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৮ অক্টোবর এই নতুন ইঞ্জিন বসানোর প্রথম যাত্রাতেই ‘চট্টগ্রাম মেইল’ ট্রেন ঢাকায় যাওয়ার পথে তেজগাঁও স্টেশনে বিকল হয়ে পড়ে।

এভাবে বছর বছর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের যাত্রাপথে দিন দিন বাড়ছে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) বিকলের ঘটনা। গত তিন মাসে পূর্বাঞ্চলের ৭০টি ট্রেনের ইঞ্জিন চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ও চট্টগ্রামমুখি ট্রেনের ইঞ্জিন ২৪ বার বিকল হয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যেখানে যানজট ও সঠিকসময়ে পৌঁছাতে যাত্রীরা ট্রেনকে বেছে নিচ্ছেন সেখানে ইঞ্জিন বিকলের কারণে যাত্রাপথে হচ্ছে সময় নষ্ট।

ইঞ্জিন বিকল হওয়ার পেছনে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব রয়েছে জানান রেল সংশ্লিষ্টরা। এর পেছনে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের গাফেলতি দেখছেন অনেকে।

শনিবার (৬ জুলাই) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল দপ্তর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ট্রেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ২৮ বার। এরমধ্যে ১ ঘণ্টার বেশি সময় বিকল ছিল ২৩ বার, ১ ঘণ্টার কম ৫ বার। এরমধ্যে চট্টগ্রাম রুটে ৭ বার ট্রেন বিকল হয়েছে। ট্রেনগুলোর মধ্যে বিজয় এক্সপ্রেস ১ বার (ইঞ্জিন নম্বর-২৯১৯), কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ১ বার (২৭০৯), উদয়ন এক্সপ্রেস ১ বার (২৯২৭), ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ১ বার (২৭১৯), মালবাহী ২ বার (২৬১৩ এবং ২৬০৪) ও তেলবাহী ১ বার (৩০১০)।

জুন মাসে ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ২৯ বার। যারমধ্যে ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিকল ছিল ১৯ বার, ১ ঘণ্টার কম ছিল ১০ বার। এরমধ্যে চট্টগ্রাম রুটের ট্রেন বিকল হয়েছে ১১ বার। ট্রেনগুলোর মধ্যে চট্টলা এক্সপ্রেস ৩ বার (ইঞ্জিন নম্বর-২৯১৩, ২৬১০ এবং ২৬০৩), তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ১ বার (৩০১১), পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ১ বার (২৯২৬), কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ১ বার (২৬০৯), মহানগর এক্সপ্রেস ১ বার (২৬০৩), মেঘনা এক্সপ্রেস ১ বার (২৯২৪), দোহাজারী লোকাল ১ বার (এমসি-১০২৮৩), মালবাহী ট্রেন ১ বার (২৬০৩) ও কন্টেইনারবাহী ১ বার (২০২২)।

এছাড়া জুলাই মাসে ১৩ বার চলতি পথে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়েছে। এরমধ্যে ১২ বার ট্রেনের ইঞ্জিনই বিকল ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। ১ বার বিকল ছিল ছিল এক ঘণ্টার কম সময়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন বিকল হয়েছে ৬ বার। ট্রেনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে বিজয় এক্সপ্রেস ১ বার (ইঞ্জিন নম্বর-২৯২৪), সাগরিকা এক্সপ্রেস ২ বার (৩০০৫ এবং ৩০০২) ও নাজিরহাট-দোহাজারী লোকাল ৩ বার (৩০০৫, ২৩১৭ এবং ২৩২৪) ।

এসব বিষয় তদারকির দায়িত্ব যান্ত্রিক প্রকৌশলের। নিয়মিত তদারকির না হওয়ার কারণে প্রায় সময় এ ধরনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এ দপ্তরের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন প্রায় সময় অফিসে থাকেন না বলে জানা গেছে। অফিসের চেয়ে তিনি সামাজিক সংগঠনে বেশি সময় দেন। তিনি রোটারী ক্লাব উওরা ঢাকার সভাপতি, কুমিল্লা বৃহত্তর সমিতির সভাপতি, আকবরশাহ এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি, রেলওয়ে জোনাল স্পোর্টসের সভাপতি পদে আছেন। এছাড়া তিনি রেলওয়েমেন্স স্টোরসের সাবেক পরিচালক ছিলেন।

একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ রাজনীতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে রেল শ্রমিক লীগের একাংশের কাছ থেকে।

প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘২৩০০, ২০২২, ২৪০০, ২৮০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো আমার জানা মতে ত্রুটিযুক্ত। স্পেয়ার পার্টর্স না থাকায় সমস্যা হয়।’

ত্রুটিযুক্ত ইঞ্জিন দিয়ে কিভাবে যাত্রীসেবা দেওয়া হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিন বিকলের তথ্য দেখে জানাতে পারবো। তবে এক্ষেত্রে তদারকির অভাব নেই।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!