চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হল খুলছে, সিট পাবে না বহিস্কৃত ৩০ ছাত্র

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ফলে বন্ধ হওয়ার ৩৫ দিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাস খুলে দেয়া হয়েছে। তাতে নতুন সিট বরাদ্দের ভিত্তিতে হলে উঠার অনুমতি পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাই হলে উঠার অনুমতি পেয়েছে। ধাপে ধাপে আগামী ৩ দিনে সকল শিক্ষার্থীদের হলে উঠার অনুমতি দেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগের ৩০ নেতাকর্মী আপাতত হলে আসন পাচ্ছেন না।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চমেকের প্রধান হোস্টেলে উঠার অনুমতি পায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এর আগের দিন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে উঠার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন হোস্টেল কমিটির তত্ত্বাবধায়ক সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ান রেহান।

এর আগে হলে সকল শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ বাতিল করে নতুন করে বরাদ্দ দেয়ার কারণে মাঝখানের বেশ কিছুদিন ক্যাম্পাস খোলা থাকলেও হল বন্ধ ছিল।

ডা. রিজওয়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ৩০ অক্টোবর কলেজের সাথে হোস্টেলও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৩ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হোস্টেলের সকল সিট বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিনের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হোস্টেলে সিট প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের নতুন করে আবেদনের জন্য বলা হয়।

হলে নতুন করে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নেই জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে সিট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সিট একসাথে রাখা হয়েছে। আর সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িত ছিলো, সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ও যারা চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দা তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।’

শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৭ তারিখ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়। এতে শনিবার থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হল বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়।

তিনি বলেন, ‘শনিবার সকালে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নাছিরাবাদ হোস্টেলে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রোববার সকালে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে প্রধান ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে পরবর্তী ৩ দিনে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে সিট বরাদ্দ দেয়া হবে।’

চমেকের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। পরে ক্যাম্পাস খুললেও হল বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। হল খোলায় স্বস্তি ফিরবে। আশা করি ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ন পরিবেশ থাকব। বহিষ্কৃতদের হলে আসন দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্যাররা। দেখা যাক উনারা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন কিনা।’

এর আগে চমেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে ২৯ অক্টোবর রাত ও ৩০ অক্টোবর সকালে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জেরে ৩০ অক্টোবর অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।

ওইদিন বিকেলে একাডেমিক মিটিংয়ে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

৩০ অক্টোবর সকালের সংঘর্ষে আহত হন মাহাদী আকিব, মাহফুজুল হক ও নাইমুল ইসলাম। তাদের মধ্যে আকিব নওফেলের অনুসারী ও বাকি দুজন নাছির উদ্দীনের।

এই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় একটি ও চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পরে দুই দফা সময় বৃদ্ধির পর ২২ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। পরদিন একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে ঘটনায় জড়িত ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ২৭ নভেম্বর কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বাকি ৩০ জন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। ২৭ নভেম্বর কলেজ খোলা হলেও হোস্টেল না খোলায় দুর্ভোগে পড়েন চট্টগ্রামের বাইরের শিক্ষার্থীরা। এদের অধিকাংশ দুই রাত ক্যাম্পাসের মসজিদে কাটানোর পর নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বন্ধুদের বাসায় আশ্রয় নেন।

এআরটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!