চট্টগ্রাম মেডিকেলে ১০ বছর বাক্সবন্দি ৩৬ কোটির মেশিন, মেয়াদ শেষে ঠাঁই পরিত্যক্তের তালিকায়

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১০ বছর ধরে বাক্সবন্দি দুটি ‘ইন্ট্রা অপারেটিভ ইমেজিং সিস্টেম’ মেশিন। অপারেটিংয়ের জন্য দক্ষ লোকবল না থাকায় এসব মেশিনের এ হাল। ১৮ কোটি টাকা দামের মেশিনগুলো বাক্সের ভেতরেই হারিয়েছে ওয়োরেন্টির মেয়াদ। প্রয়োজনীয় চাহিদা ছাড়া পাঠানো এসব মেশিন এখন জায়গা করে নিয়েছে পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতির তালিকায়। এখন পর্যন্ত মেশিন দুটির একটি কার্ডিয়াক সার্জারি ও অন্যটি জেনারেল সার্জারিতেই পড়ে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, উন্নত দেশে জটিল প্লাস্টিক সার্জারি অ্যান্ড রি-কনস্ট্রাক্টিভ সার্জারিতে এ মেশিন ব্যবহার হয়ে থাকে। কিনতু বাংলাদেশে এ মেশিন দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো লোকবল নেই। তাছাড়া এটি দিয়ে চিকিৎসা দিতে গেলে ব্যয়ও বাড়বে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লির কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া তেমন কোথাও এই মেশিন ব্যবহার করে না। কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে প্রয়োজন ছাড়াই এসব মেশিন আনা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১২ সালে কোনো ধরনের প্রয়োজনীয় চাহিদা ছাড়াই ৫টি ‘ইন্ট্রা অপারেটিভ ইমেজিং সিস্টেম’ মেশিন কেনে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার। পরে এগুলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কিন্তু অপ্রয়োজনীয় এসব মেশিন গ্রহণ করতে অপরাগতা প্রকাশ জানায় হাসপাতালগুলো। ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর মেশিন ব্যবহারে অপারগতা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে চিঠি দেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

একইভাবে ২০১৩ সালে ২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালককে মেশিন ফেরত নিতে অনুরোধ জানান। একই কারণ দেখিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফজালুর রহমানও মেশিন ফেরত নিতে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারকে চিঠি দেন।

এসব চিঠির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. এসএম ইব্রাহীম মেশিন তিনটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী, একটি মেশিন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কুমিল্লার মেডিকেলের মেশিনটি চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। অপরটি ওষুধাগারেই রয়ে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের কার্ডিয়াক সার্জারিতে গিয়ে দেখা গেছে, মেশিনটি একটি রুমে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু রুমটির ভেতরে যেতে চাইলে প্রতিবেদককে বাধা দেন ওয়ার্ডবয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতির তালিকায় মেশিন দুটোর নাম ওঠেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের কার্ডিয়াক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুমন নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘আমি এ মেশিনের কোনো চাহিদাপত্র দিইনি। কারণ এ মেশিনের ব্যবহার ব্যয়বহুল। আর এ মেশিন প্রতিস্থাপন ও ব্যবহারের লোকবল চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেই। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের অদূরদর্শীতার কারণে এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা গেছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ছাড়া দেশের অন্য কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের মেশিন ব্যবহারের কোনো সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তাও নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেল সার্জারিতে এ মেশিনের কোনো ব্যবহার উপযোগিতা নেই। তারপরও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জেনারেল সার্জারিতে এ মেশিন পাঠানো হয়। তবে কার্ডিওভাসকুলর সার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি বা প্লাস্টিক সার্জনদের চিকিৎসায় এর কিছু উপযোগিতা রয়েছে। কিন্তু এটি প্রতিস্থাপন করা হলে রোগ নির্ণয়ও ব্যয়বহুল হতো।’

ডা. নাজমুল বলেন, ‘উন্নত দেশে জটিল প্লাস্টিক সার্জারি অ্যান্ড রি-কনস্ট্রাক্টিভ সার্জারিতে এই মেশিন ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। ভারতেও দিল্লির দু-একটি হাসপাতাল ছাড়া এ মেশিনের ব্যবহার হয় না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!