চট্টগ্রাম মেডিকেলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হলেও বাড়ছে মা ও শিশু হাসপাতালে

শিশুদের নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ ডাক্তারদের

গরম যতো বাড়ছে, ততোই বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। সচরাচর এপ্রিলে এই রোগ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও এবার মার্চ থেকেই ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার রোগী বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। তবে স্বাস্থ্যখাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানাচ্ছেন, চট্টগ্রামে এখনও ডায়রিয়া পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিকই’ আছে। ডায়রিয়া নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে এই সময়ে বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে সতর্ক থাকতেও বলছেন চিকিৎসকরা।

কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কম হলেও বেড়েছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি ছিল ৫০ জন। মোট সিট এখানে ৫৩টি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৭ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরোগী ভর্তি আছে ৭ জন।

এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের গত ২৪ ঘণ্টার হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলাধীন ১৫ উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ১০৭ জন।

চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার পেছনে গরমের পাশাপাশি খাওয়ানোর ফিডার ঠিকমত পরিস্কার না করা অন্যতম কারণ। মায়েদের উচিত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং বাচ্চার ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন খাওয়ানো।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে খাবারে দ্রুত জীবাণু জন্ম নিতে পারে। গরমে রাস্তার পাশে খোলা খাবার, লেবুর শরবত খাওয়ার ফলে প্রাপ্তবয়স্করা ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণভাবেই প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যে ডায়রিয়া হয় তার প্রধান কারণ কলেরা এবং ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এগুলো ছড়ায় দূষিত পানি ও পচা-বাসি খাবার থেকে। তবে শিশুদের ডায়রিয়া হয় রোটাভাইরাসের কারণে। এছাড়া শিগেলা ব্যাকটেরিয়াও একটি কারণ। ডায়রিয়া হলে রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। স্যালাইনের পাশাপাশি সাধারণ পানি, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল পানীয় দিতে হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, রোজার আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ১৮০ জন রোগী আসত। তখন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরোগী থাকতো ১৫ থেকে ২০ জন। এখন আসছে ১৪০ থেকে ১৪৫ জন। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরোগী থাকছে ১২ থেকে ১৩ জন। তাই শিশুরোগী নতুন করে বেড়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে গরম বাড়ায় শিশুদের কেউ কেউ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। সঙ্গে কারও ডায়রিয়া থাকছে। তবে আগের মতোই নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস রোগী থাকছে।

এই গরমে শিশুদের বেশি করে ফোটানো পানি পান করানোর পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক আরও বলেন, বাইরের খোলা খাবার জীবাণুভর্তি থাকে। পোড়া তেলে হোটেলে রান্না হচ্ছে। তাই বাইরের খাবার, জুস, চকোলেট—কোনো কিছুই এখন শিশুদের খাওয়ানো যাবে না। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে বার বার। অবশ্যই শিশুরোগ চিকিৎসকের কাছে অথবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে শিশুদের। শিশুদের অবশ্যই সুতির কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। শরীরে ঘাম যাতে না জমে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত সাতজন শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাই এই রোগীর হিসাব থেকে বলা যায় না, চট্টগ্রামে শিশুদের ডায়রিয়া বেড়েছে।

একই কথা বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয়। তিনি বলেন, সাধারণ জ্বরের রোগীর সঙ্গে ডায়রিয়া রোগী আসছে, তবে সেটি বেশি না। মেডিসিনের তিন ওয়ার্ডে মিলে ১৩, ১৪, ১৬ মিলে ৪৫ থেকে ৫০ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহিম রেজা। তিনি বলেন, হাসপাতালের শিশুরোগ ওয়ার্ডে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে ৫০ জন। মোট সিট এখানে ৫৩টি।

ডা. ফাহিম রেজা বলেন, মূলত গরমের কারণেই ডায়রিয়ায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। আর এ বছর গরমটা হঠাৎ করে বেড়েছে। শিশুরা ঋতু পরিবর্তনের এই ধরনের সঙ্গে সবসময় মানিয়ে নিতে পারে না। আর এজন্যই জ্বর ও ডায়রিয়া শিশুদের কাবু করে ফেলে। তবে হাসপাতালগুলো শিশুদের চিকিৎসায় বরাবরই প্রস্তুত থাকে। এজন্য হাসপাতাল থেকেও সবরকম সাপ্লিমেন্টরি ব্যবস্থাও নেওয়া আছে।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!