চট্টগ্রাম মেডিকেলের ডেন্টালে অশনি সংকেত, ৩৪ ডাক্তারের ২৩ জনই বদলি

দন্তরোগের পুরো বিভাগই মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্তরোগ বিভাগের ৩৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ২৩ জনকেই বদলি করা হয়েছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে। প্রতিদিন দন্তরোগ বিভাগে রোগী থাকে ২৫০ থেকে ৩০০ জনের মতো। আর ইনডোরে রয়েছে ২০টি শয্যা। তবে রোগী ভর্তি থাকে ২৫ থেকে ৩০ জন। বদলি হওয়া ২৩ জন ডাক্তারের বেশিরভাগই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসক। ওই তালিকায় রয়েছেন ১১ জন সহকারী অধ্যাপক ও একজন কনসালটেন্ট এবং বাকিরা প্রভাষক।

দন্ত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনজুর ই মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দন্ত বিভাগের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করার অনুরোধ থাকবে। কারণ আমরা দাঁতের চিকিৎসা করি। করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিভাগ পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমরা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে নতুন করে আবেদন করবো।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্তরোগ বিভাগ থেকে বদলির আদেশ পাওয়া ১১ জন সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে ডা. মনজুর ই মাহমুদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরই কোভিড ইউনিটে, ডা. তামান্না বেগমকে চমেক হাসপাতালে, ডা. মো. আবু তাহেরকে ফেনীর দাগনভূঁঞা হাসপাতালে, ডা. সঞ্জয় দাশকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, ডা. মোরশেদ খানকে জেনারেল হাসপাতালে, ডা. মোহাম্মদ হোসেন ভূঞাকে চমেক হাসপাতালেই বদলি করা হয়েছে।

অন্যদিকে ডা. আবু রুশ মোহাম্মদ মাশরুরকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, ডা. খোদেজা আক্তারকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, ডা. ফারহানাকে ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে, ডা. মো. কামাল উদ্দিনকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এবং ডা. তামান্না জহুরকে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।

এই ১১ জন ছাড়াও কনসালটেন্ট ডা. খায়রুল আলম চৌধুরীকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।

এছাড়াও বদলি করা হয়েছে একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকেও। সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আবুল হোসেনকে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে। প্রভাষকদের মধ্যে ডা. জাভেদ বিন হোসাইন, ডা. মো. ঈশা চৌধুরী এবং ডা. জাহাঙ্গীরকে বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ডা. আঞ্জুমান ইয়াছমীনকে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে। ডা. একেএম রাহাত খানকে বিআইটিআইডি হাসপাতালে, ডা. মো. মেহেদি হাসান ও ডা. জিএম মুরশিদকে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে এবং ডা. লাইলী ইয়াছমীনকে ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।

এছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা প্রভাষক নিগার সুলতানাকে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে। ডেন্টাল মাইক্রোবায়োলোজিস্ট সারাহ ফাতেমা সুমাইয়াকে বদলি করা হয়েছে ফেনী জেলা হাসপাতালে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্তরোগ বিভাগে ছয়টি ক্লিনিক্যাল বিভাগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে— পেরিওডেন্টোলজি, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি, কনজারভেটিভ অ্যান্ড এন্ডোডন্টিকস, চিলড্রেন ডেন্টিস্ট অ্যান্ড ওরাল ডায়াগনোসিস, অর্থোডনশিয়া এবং প্রোসথোডনশিয়া।

দন্ত বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিট হল অর্থোডেনটিকস। এখানে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী আসেন। সেখান থেকে চারজন ডাক্তারকেই বদলি করা হয়েছে। কনজারভেটিভ অ্যান্ড এন্ডোডন্টিকস বিভাগে রুট ক্যানেল, ফিলিং করা হয় রোগীদের। এখান থেকে ৩ জন ডাক্তারকেই বদলি করা হয়েছে। আছেন মাত্র একজন প্রভাষক।

ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারিতে মুখের ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা করানো হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও রংপুরেই শুধু এই বিভাগটি রয়েছে। মুখের টিউমার, মাড়ির হাড়ভাঙ্গার চিকিৎসাও চলে এখানে। ইনডোরে রয়েছে এ ইউনিটের অধীনে ২০টি বেড। রোগী থাকে ২৫ থেকে ৩০ জন। কিন্তু এ ইউনিটের চারজন ডাক্তারকেই বদলি করা হয়েছে। এই বদলিতে ওরাল ক্যান্সারের চিকিৎসা কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মরত চিকিৎসকরা।

এছাড়া চমেকে চালু করা হয়েছে ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল সার্জারি (ডিডিএস) কোর্স। তাছাড়া এখানে চলে এফসিপিএস ট্রেনিং। ডাক্তারদের আকস্মিক বদলিতে এর সব কার্যক্রমই মুখ থুবড়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন দন্ত বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকরা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!