চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে বিবাহিত ৫৬, অছাত্র ১৬২ জন

সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ নাছিরপন্থী নেতাদের

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ, অছাত্র, বিবাহিত ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছেন ওই কমিটিরই একাংশ; যারা কিনা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। তাদের অভিযোগ, ‘কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, বহিস্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে নগরীতে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।’ এ অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে ছাত্রলীগকে গতিশীল করার লক্ষ্যে এই মেয়াদোত্তীর্ণ, অছাত্র, বিবাহিত ও গঠনতন্ত্রবিরোধী চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল ও নতুন কমিটি গঠনের দাবি পুনর্বার জানিয়েছে কমিটির একাংশ। এসব দাবিতে গত মঙ্গলবার (২৯ মে) বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা।

কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় উপ-সম্পাদক নাছির উদ্দীন কুতুবী স্বাক্ষরিত ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর নগর শাখার ২৪ জনের সম্মেলনবিহীন আংশিক কমিটি ঘোষণা ও পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে গঠনতন্ত্র বিরোধী পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি সম্মেলনবিহীন হওয়ায় নগরীর থানা ও ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ তাদের কাউন্সিলর ভোটাধিকারের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনে বঞ্চিত হয়েছে। পরবর্তীতে পদবঞ্চিতদের আন্দোলন পরিণত হয় ক্ষোভে। এর জেরে নগরীর সার্কিট হাউজে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হয়।’

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, ‘বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ নগর কমিটির নেতৃবৃন্দের ছাত্রত্ব না থাকায় এবং অনেকে গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালের কমিটিতে প্রায় সবারই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা ২৯ বছরের ওপরে ছিল। অনেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় ছাত্রলীগের সংগঠনের পদ পায়। ওই অবস্থায় ছাত্রত্বও ছিল না অনেকের। সংগঠনের অনেকেই এখন বিবাহিত হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত হয় না। এ কারণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ছয় মাস চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিতর্কিত কমিটি স্থায়ী হওয়ায় বিভিন্ন কলেজ, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতৃত্ব শূন্যতায় ছাত্রলীগ।’

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন ইমরান আলী মাসুদ, মনির চৌধুরী, হুমায়ুন কবির আজাদ, রায়হানুল কবির শামিম, নাছির উদ্দিন কুতুবী, রাশেদ চৌধুরী, অরবিন সাকিব ইবান, ওসমান গণি, ফাহাদ আনিস, নেওয়াজ খান, মোস্তফা কামাল, জালাল আহমেদ রানা, নুরুল হক মনির প্রমুখ। এরা সবাই নাছিরপন্থী হিসেবে পরিচিত।

এ বিষয়ে নাছির উদ্দীন কুতুবী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকার্যকর কমিটির বাতিল এবং নতুন নতুন নেতৃত্বের দাবিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ওই কমিটি আজ পর্যন্ত ১৪টি থানা, ৪১টি ওয়ার্ড এবং কলেজগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। তাই মেধাবীদের নিয়ে যেন ছাত্রলীগের প্রগতিশীল কমিটি গঠন করা হয়।’ তিনি জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ২৯১ সদস্যের কমিটিতে ৫৬ জন বিবাহিত ও ১৬২ জন অছাত্র। এরা হলেন, সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সহ-সভাপতি মো.তালেব আলী, ইমতেয়াজ বাবলা, লুৎফুল এহশান শাহ, নাজমুল হাসান রুমি, শহিদুল ইসলাম শহিদ, রাজা মিয়া, ফারুক ইসলাম, একরামুল হক রাসেল, সারোয়ার উদ্দীন, ইয়াসিন আরাফাত কচি, ফররুখ হোসন পাবেল, মাইনুল হাসান চৌধুরী শিমল, দিদারুল আলম, আব্দুল খালেক, আবু মো.আরিফ, মো. শাকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনুর রহমান মঈন, রিয়াজুল করিম বিলাস, ফরহাদ হোসেন মিষ্টি, সুজন বর্মন, অমিতাব চৌধুরী বাবু, গোলাম সামদানি রনি; সাংগঠনিক সম্পাদক মঈন শাহরিয়ার, খোরশেদ আলম, হাসমত আলী রাসেল, শওকত আলী রনি, আয়াজ উদ্দিন, ইরফানুল আলম জিকু, সাইফুল ইসলাম; স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. দেবাশিষ দেবু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল, উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তুষার দর, উপ সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, উপ প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম মান্না, উপ সম্পাদক আবদুল হালিম মিন্টু, মোফাজ্জল তুষার, অভিক দাস, রাসেল উদ্দিন তালুকদার, সহ সম্পাদক শাহজাহান সাজু, এহসানুল কবির ববি, রাহুল দাস, রোকন উদ্দিন চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন জিকু, শাহেদ মিজান, আবু সায়েম সেতু, জিয়াউল হক জিয়া, সাব্বির সাকির, উপ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন টিটু, উপ সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রনি তালুকদার, সদস্য তানজিরুল হক, সৈকত দাশ, শাখাওয়াত হোসেন পেয়ারু, গাজী আক্কাস, ফয়সাল অভি, মো. শরিফ আহাম্মেদ।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির মোবাইল সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগে আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইয়ের অনুসারী যারা আছেন, তারা কমিটির সাংগঠনিক কোনো কাজে অংশগ্রহণ করে না। তাই তাদের অভিযোগের কোনো গুরুত্ব নেই। চট্টগ্রামে কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ- কারোরই কমিটি নেই। কেন্দ্র থেকে যখনই সম্মেলনের নির্দেশনা আসবে, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!