চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপ। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে ভাঙচুর চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও স্থাপনায়। আর এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। অন্যদিকে সংঘর্ষকে পুঁজি করে রুম থেকে লুটপাট করা হয় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র এবং ভাঙচুর করা হয় শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেলও।
সর্বশেষ ছাত্রলীগের তিন দিনের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। তবে ক্ষয়ক্ষতি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা বা তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২ মার্চ) আলাওল হলের একটি রুম দখলকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয় কনকর্ড ও বিজয় গ্রুপের দুই কর্মীর মধ্যে। এ ঘটনার জেরে পরদিন মঙ্গলবার দুই গ্রুপের মধ্যে তুমূল সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার রেশ ধরে সংঘর্ষ গড়ায় তৃতীয় দিনেও। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিজয় গ্রুপ ও কনকর্ড গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিজয় গ্রুপ সোহারওয়ার্দী হল থেকে এবং কনকর্ড গ্রুপ শাহাজালাল হলের সামনে থেকে বৃষ্টির মতো ইট ও ভাঙ্গা কাঁচ ছোড়ে। এ ঘটনার রেশ ধরে রাত দেড়টার দিকে স্যার এ এফ রহমান হলে বিজয় গ্রুপের ওপর আক্রমণ করে নাছিরের অনুসারী সব গ্রুপ। এ সময় তারা হলে ব্যাপক করে তাণ্ডব চালায়। ভাঙচুর করে ৮০টিরও বেশি কক্ষ। ওয়াশরুমের ভেসিনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ও মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলে। যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে রুম ভেঙে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও ৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৬ লাখ বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নির্লিপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা বা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। বরং ছাত্রলীগের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রাতে আটক করা ৮ কর্মীকে। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নেতারা সমঝোতা করলেও তা মানতে নারাজ জুনিয়র কর্মীরা।
এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় সালাউদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার রুম থেকে নগদ ৫২ হাজার টাকা, ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ল্যাপটপ, জামা-কাপড় সব মিলিয়ে ১ লাখ টাকার জিনিসপত্র লুটপাট করেছে। আমি আগামীকাল প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর আরেক খেলোয়াড় তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি হলের বৈধ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়। হলের ভেতরে থাকা আমার মোটরসাইকেলে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এতে প্রায় ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম আরও ৪টা মোটরসাইকেলে একইভাবে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, ‘ভাঙচুরের ফলে আমাদের একলাখ ৮৫ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে হলের স্টাফরা জানিয়েছেন। আগামীকাল বিস্তারিত বলতে পারবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রক্টর এসএম মনিরুল হাসান বলেন, ‘সবাই সমঝোতায় পৌঁছাতে আমরা কোনো মামলায় যাচ্ছি না। আমাদের থেকে আগামীকাল একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে যে ব্যবস্থা নিব তা সবাই মেনে নেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
এএইচ