চট্টগ্রাম বন্দরে আগের ওয়াচম্যানদেরই কাজ নেই, নতুন নিয়োগের দৌড়ঝাঁপ

চট্টগ্রামের নিবন্ধিত সংগঠনের মাধ্যমে ১২ বছর আগে ওয়াচম্যান (শ্রমিক) হিসেবে ৬৫০ জনকে নিয়োগ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শ্রমিকরা প্রতিদিন বন্দরে কাজ করার সুযোগ পায় না। প্রত্যেক শ্রমিক প্রতিমাসে কাজ পাচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৫ দিন মাত্র।

দীর্ঘদিন ধরে বাড়েনি তাদের বেতনও। এতে অল্প বেতন ও আর মাসে মাত্র কয়েক দিন চাকরি করে সংসার চালাতে হিমশিত খেতে হচ্ছে এসব শ্রমিকের।

সম্প্রতি নতুন করে ওয়াচম্যান নিয়োগ দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বর্তমান শ্রমিকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। বুধবার (১৫ জুন) সকালে ওয়াচম্যান নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের ভেতরে প্রায় শতাধিক লোককে ওয়াচম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করছেন চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফসহ চট্টগ্রামের সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। জেনে এ বিষয়ে আপনাকে (প্রতিবেদক) জানাবো।’

পরবর্তীতে প্রতিবেদক ঘন্টাখানেক পরে আবারও ওই কর্মকর্তাকে কল করেন। এ সময় তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে প্রতিবেদকের মুঠোফোন নম্বরে এসএমএস পাঠান।

জানা যায়, ২০০৭-২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ও আউটারে ওয়াচম্যান সরবরাহ করে আসছে চট্টগ্রামের মোট পাঁচটি সংগঠন। এই সংগঠনগুলোর শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।

২০০৯ সালে এই সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ‘ওয়াচম্যান ব্যবস্থাপনা পরিচালনা পদ্ধতি নীতিমালা’ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই নীতিমালার আওতায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের নীতিতে ওয়াচম্যান বুকিং সেল পরিচালনা করা হয়।

সেখানে বন্দরের কর্মরত ডেপুটি ডিরেক্টর (সিকিউরিটি, প্রশাসন) ও একজন সিকিউরিটি কর্মকর্তাকে ওয়াচম্যানদের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের পাঁচটি সংগঠন থেকে ৬৫০ জনকে ওয়াচম্যান হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে বন্দরে প্রবেশের অনুমতিপত্র ও পরিচয়পত্র সরবরাহ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই শ্রকিদের বেতন নির্ধারণ করা হয় ১২ ঘণ্টায় ৬৫০ টাকা করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বন্দরের কার্যক্রম বাড়ালে শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া ওই নীতিমালায় ওয়াচম্যানদের বেতন বৃদ্ধি, ঈদ বোনাস ৫ হাজার টাকা, তাদের ইউনিফর্ম, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা সেবা ও চাকরি স্থায়ীকরণের কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ১২ বছর আগের এই নীতিমালার কোনো শর্ত এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্তরাই যেখানে ঠিকমতো কাজ পায় না সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্টো ১০৪ জন লোক নতুন করে নিয়োগ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম ফসিউল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর আগে আলোচনার মাধ্যমে ৬৫০ জনকে ওয়াচম্যান হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের এখন পর্যন্ত স্থায়ী করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০০৯ সালের নীতিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই প্রতিদিন ঠিক মতো কাজ পায়না। নতুন করে ওয়াচম্যান নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখে শ্রমিকরা হতবাক হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাপনাও এমন কর্মকান্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নীতিমালায় জনপ্রতি ওয়াচম্যানদের ১২ ঘণ্টায় ডিউটি করে ৬৫০ টাকার বেতন ধার্য ছিল। এক যুগ পরও সেই বেতন আরও বাড়েনি। কোনো শ্রমিক মারা গেলেও নীতিমালা বাস্তবায়নের কোনো আগ্রহ নেই কর্তৃপক্ষের। ঈদ বোনাস নেই। নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকরা সবাই মাসে ৫ থেকে ৬ দিন কাজ পায়। এই টাকা দিয়ে কি সংসার চালানো যায়?’

এমএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!