চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অবৈধ পার্কিং বাণিজ্য’—চসিক কাউন্সিলরসহ ৩ সিন্ডিকেট, দিনে ‘টার্গেট’ দেড় লাখ

চট্টগ্রামের বন্দর থানার ইস্ট কলোনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তালতলা মাঠ ঘিরে রয়েছে প্রায় ২০ একর পরিত্যক্ত জায়গা। কয়েক কোটি টাকা মূল্যমানের এসব জায়গার মালিক চট্টগ্রাম বন্দর। বিদ্যালয় মাঠের বিপরীতে টিসিবি গোডাউন মাঠ, তালতলা মাঠ টার্মিনাল ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকাসহ মোট চার স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পার্কিং।

পৃথকভাবে গড়ে ওঠা এ চার স্থানে পার্কিং বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন একজন কাউন্সিলর, একজন নগর ছাত্রলীগ নেতা, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক ও ড্রাইভার সমিতির সভাপতি এক পুত্র ও এক হিজড়া সুমন নামে পরিচিত একজন। এসব পার্কিং থেকে প্রতিদিন আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা, বছরের হিসেবে যা প্রায় ৫ কোটির কাছাকাছি।

দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান প্রতিদিন ঢুকছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এসব গাড়ি বন্দরে ঢুকার আগে পার্কিং করছে ওই এলাকায়। অবৈধভাবে পরিচালনা করা এসব পার্কিংয়ে চার সিন্ডিকেটের লোকজন প্রতিদিন প্রতিটি গাড়ি থেকে নিচ্ছে ১৫০ টাকা করে।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমি কর্মকর্তার বিশেষ আর্শিবাদে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে অবৈধ এই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পার্কিং বাণিজ্য। এর আগে সুমন প্রকাশ হিজড়া সুমনের নেতৃত্বে এককভাবে পার্কিং বাণিজ্য চললেও সম্প্রতি সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর নির্বাচনের পর থেকে এ নিয়ন্ত্রণ ভাগ হয়ে যায় চারটি গ্রুপে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বন্দর থানার ইস্ট কলোনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তালতলা মাঠ দখল করে প্রতিদিন সেখানে ৩০০ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ি থেকে পার্কিং ভাড়া হিসেবে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোর্শেদ আলী। সাথে রয়েছে তার ছোট ভাই শাহেদ আলী, যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন, ফরহাদ, নাছির সাজ্জাদ।

একইস্থানে বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ ছাড়াও ইস্ট কলোনি টিসিবি গোডাউন মাঠ, তালতলা মাঠ, টার্মিনাল মাঠের পার্কিং বাণিজ্য নিন্ত্রয়ণ করছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক আরিফ হোসেন ও সুমন প্রকাশ হিজড়া সুমন। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ি থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা করে।

এছাড়া বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন পার্কিং বাণিজ্য নিন্ত্রয়ণ করছেন চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি মো. শফির পুত্র মনা। এই নেতার নিয়ন্ত্রণে পার্কিং বাণিজ্য চলছে প্রায় ৩০০টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এখানেও প্রতিটি গাড়ি থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন প্রকাশ হিজড়া সুমন বলেন, ‘আমি কোনো পার্কিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নই। পরে প্রতিবেদককে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা দেখিয়ে মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোর্শেদ আলী বলেন, ‘আমার লোকজন ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থেকে টাকা নিচ্ছে, তা সঠিক নয়। আপনি ভাল করে খোঁজ খবর নেন।’

জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি ওখানে দীর্ঘদিন ধরে হিজড়া সুমন নামে একজন ওই এলাকায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থেকে টাকা তোলে। আমার পুলিশ সেখানে যায়ও না। আমি বন্দর থানার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে থানার কর্মকর্তাদের কড়া ভাষায় সবাই সতর্ক করেছি যাতে এসবে জড়িত না হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমি কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ তোলেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘আগে জানতে হবে জায়গাগুলো বন্দরের কিনা। যদি বন্দরের জায়গা হয় তাহলে ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!