চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ব্যানারে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সোনালী যান্ত্রিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে। প্রতিটি দোকান বাবদ ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ।
কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী এলাকায় রাজাখালী ও চাক্তাই খালের মোহনা এলাকায় ২০১৫ সালে তিন শর্তে সোয়া দুই একর জায়গা জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ইজারা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইজারার তিন শর্ত ছিল দেশি ও বিদেশি ক্রেতারা যাতে জেলেদের কাছ থেকে সরাসরি মৎস্য সংগ্রহ করতে পারে, প্রান্তিক জেলেদের ন্যায্যমূল্যে মৎস্য অবতরণ ও বিপণনে সহায়তা। এজন্য শুধুমাত্র তাদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি লিজ নিলেও পরে তা দেখভালের দায়িত্ব নেয় সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমিতি।
অভিযোগ উঠেছে, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় দেড় বছর পর আরও দুই হাজার বর্গফুট জায়গা দখল করে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে প্রায় আড়াইশ’ দোকান। বেশিরভাগ দোকান বরাদ্দ পায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতা ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। নির্মিত হয়েছে হিমাগার ও বরফকল। এছাড়া পুরো চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকায় একাধিক ঝুপড়িতে রয়েছে তাদের ভাসমান ব্যবসা। প্রতিদিন এসব স্থাপনা থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সমিতির বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে কথা হলে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, কর্ণফুলী তীরবর্তী এলাকায় বন্দর থেকে সোয়া দুই একরের জায়গা ১ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয় জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে। ওই সমিতির আন্ডারে লিজ হলেও পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করছেন সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
তিনি এ ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
আমিনুল হক বাবুল সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই লিজ নেওয়া হয়েছে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে। প্রতিবছর এই লিজ নবায়ন হয়। বন্দরের প্রয়োজন না হলে জায়গাটিতে মৎস্য অবতরণের অনুমতি বহাল থাকবে।
দোকান বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি বিদেশি সংস্থার টাকায় রাজাখালী ও চাক্তাই এলাকায় দোকানগুলো নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পর সমিতিকে এককালীন ৫০ লাখ টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধীনে নেয়া হয় দোকানগুলো। সমিতির সদস্যরাই মূলত এই দোকানগুলোর বরাদ্দ পেয়েছে।
মোটা অংকের টাকায় দোকান বেচাকেনার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে তিন শর্তে একসনা ইজারা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সোয়া দুই একরের এ জায়গাটি থেকে বছরে ১৬ লাখ টাকার একটি ফি নির্ধারণ করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, সেখানে দোকান বেচাকেনা বিষয়ে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি বিষয়টি সত্য হয়, তাহলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।
মুআ/সিআর/সিপি