চট্টগ্রাম প্রতিদিনে নদভীর ভিডিও, নির্বাচন কমিশনে সুফিয়ানের নালিশ

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে নৌকার পক্ষে ভোট গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়ার একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এর ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু সুফিয়ান।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে তিনি লিখিত ওই অভিযোগ দায়ের করেন। একই দিন আবু সুফিয়ান সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আরেক অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন কর্তৃক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করাকে নির্বাচন বিধিমালার লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।

অভিযোগে আবু সুফিয়ান উল্লেখ করেছেন, ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন-এ মাননীয় সংসদ সদস্যের (সাতকানিয়া লোহাগাড়ার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী) বক্তব্যের সংবাদ ও ভিডিও সহ প্রকাশিত হয়। মাননীয় সংসদ সদস্যের এমন নীলনকশা এবং দম্ভোক্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা শুনে সাধারণ ভোটারগণ শঙ্কিত এবং আদৌ অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা জনগণের মধ্যে সংশয় সন্দেহ বিরাজমান। মাননীয় সংসদ সদস্য যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা নির্বাচন বিধিমালা-২০০৮ এর পুরোপুরি লঙ্ঘন ও বেআইনি। জনপ্রতিনিধি হয়ে দায়িত্বশীল পদে থেকে জনগণের ভোটাধিকার হরণের যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ন্যাক্কারজনক। মাননীয় সংসদ সদস্যের এ বক্তব্য রীতিমতো নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন আচরণ বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার শামিল।’

উল্লেখ্য, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর লালখান বাজারস্থ মোছলেম উদ্দিনের বাসভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাতকানিয়া লোহাগাড়ার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী স্বীকারোক্তি দেন— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় একাই সাতটি কেন্দ্র দখলে নিয়েছিলেন তিনি। এমনভাবে নিয়েছিলেন তার মতো একজন মাওলানাকে অনেকে ‘গুণ্ডা-সন্ত্রাসী’ হিসেবেই ডাকছিল— এমন স্বীকারোক্তিও দেন প্রকাশ্য সভায়। এবারও ‘নিজের সর্বোচ্চ’ দিয়ে বাদলের শূন্য চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমদকে জিতিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত এই সাংসদ।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা এক ভিডিওতে শোনা যায় সাতকানিয়ার এমপি আবু রেজা নদভী বলছেন, ‘আমরা সবাই কাজ করবো উনার জন্য। বোয়ালখালীতেও যাব, এবং চান্দগাঁও এরিয়াতেও আমি যাব। চান্দগাঁও এরিয়া যেহেতু আমার এরিয়া, আমি ওখানে থাকি। ইনশাল্লাহ আমরা একসাথে কাজ করব। …ইনশাল্লাহ আমরা চান্দগাঁও এলাকায় থাকব। আ জ ম নাছির সাহেবের নির্বাচনের জন্য চান্দগাঁও সাতটি কেন্দ্র আমি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলাম। সাতটি কেন্দ্র এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে নিছিল, তখন নদভী সাহেবকে তো আলেম মনে করতাম, উনি তো সন্ত্রাসী বোধহয়। কয় দে উনি তো গুণ্ডা সন্ত্রাসী, আলেম মনে করতাম।’

এমপি আবু রেজা নদভী বলছেন, ‘আমরাও ইনশাল্লাহ কাজ করবো। চান্দগাঁওতে কাজ করব, বোয়ালখালীতে কাজ করব। এবং বোয়ালখালীতে আলেম-ওলামাদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আলেম-ওলামাদের সাথে অলরেডি আমি কথা বলেছি। যেভাবে আমাদের নেতৃবৃন্দ নির্দেশনা দেয় সেভাবে আমরা কাজ করবো ইনশাল্লাহ। এবং মোছলেম ভাইকে ইনশাল্লাহ আমরা এমপি বানায়ে সংসদে ইনশাল্লাহ নিয়ে আসব।’

এ সময় প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত চন্দনাইশের এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ জেলার সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের প্রত্যেকে কিছুক্ষণের জন্য হতচকিত হয়ে যান। কাউকে কাউকে হাসতেও দেখা যায়।

গত সংসদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল বিএনপির। তাদের দাবি ছিল সরকারদলীয় প্রার্থী জোর করে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়েছে। যদিও বা সরকার পক্ষ থেকে তা বারবার অস্বীকার করছিল। এমনকি চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও ধানের শীষের প্রার্থী ছাড়াও বিএনপি নেতাদের আশংকা— নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা? এমনই সময়ে এমপি নদভীর এই বক্তব্য সামনে আসলো।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!