চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির আলোচনায় একঝাঁক মুখ

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ যতোই সামনে এগিয়ে আসছে, পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে ততোই বাড়ছে স্নায়ুর লড়াই। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটি এমন দৃশ্য অতীতে আর কখনও দেখেনি। না দেখারই কথা, কারণ সংগঠনটির ইতিহাসেই প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৯ জুন। এতে কোন্ প্রক্রিয়ায় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে— তা নিয়ে দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে নানান জল্পনা কল্পনা।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে নানান হিসাবনিকাশ মেলানোর প্রচলিত রেওয়াজ চলে আসছে অনেক বছর ধরেই। তবে এবার সেই রেওয়াজ ভাঙতে চাইছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা। এক্ষেত্রে বলয়ভিত্তিক হিসাবনিকাশ বাদ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনে সক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি তাদের।

দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত নগর আওয়ামী লীগের একটি ধারার নেতৃত্বে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও অন্য ধারার নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার নেতৃত্বাধীন বলয়টির হাল ধরেছেন মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

জানা গেছে, শুরুর দিকে দুই ধারায় বিভক্ত নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া আগানো হলেও দীর্ঘ ২১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা চাইছেন বলয়ভিত্তিক হিসাবনিকাশের বাইরে এতদিন ধরে সংগঠনে শ্রম দেওয়া নেতাদের প্রাধান্য দিয়েই নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা হোক।

তবে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই কমিটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থেকেও কোনো থানা বা ওয়ার্ডে কমিটি দিতে না পারা এবং সম্মেলন করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা রয়েছে বরাবরই। এর পরও বলয়ভিত্তিক রাজনীতির বাইরে থেকে সংগঠন পরিচালনা করার বিষয়ে তাদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে এটা একেবারেই ব্যতিক্রমী। এসব কারণে বলয়ভিত্তিক হিসাবনিকাশের বাইরে নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবিটিও নজর কেড়েছে সংগঠনটির নীতিনির্ধারকদের— বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এমন কথা।

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দুই দফায় পেছানোর পর আগামী ১৯ জুন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে সম্মেলনস্থলে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৭ বছরের পথচলায় চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির প্রথম এই সম্মেলনে কোন্ প্রক্রিয়ায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে— তা নিয়ে দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে নানান জল্পনা কল্পনা।

সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের সম্ভাবনা অনেকটা শূন্যের কোঠায় রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে সাবজেক্ট কমিটি গঠনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা বলা হলেও সেটিও অনিশ্চিত। আপাতত নগরের সম্মেলনকে দীর্ঘদিন থমকে থাকা সম্মেলন প্রক্রিয়াকে নতুন করে শুরুর উদ্যোগ হিসেবেই দেখতে চাইছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এবার কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন নেতা আলোচনায় রয়েছেন। এর মধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন, সুজিত দাশ, আব্দুর রশিদ লোকমান ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। এদের মধ্যে নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে শুরু থেকেই হেলাল উদ্দিন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর এই ছোট ভাইকে নিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিনের বলয়ে খানিকটা ভিন্নমতও রয়েছে। এই ভিন্নমত হালে পানি পেলে এই বলয় থেকে সামনে চলে আসতে পারে লোকমান কিংবা সালাউদ্দিনের নামও।

অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারীদের মধ্যে আজিজুর রহমান, দেবাশীষ নাথ দেবু, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালের নামই আলোচিত হচ্ছে বেশি।

এর বাইরে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, সাদেক হোসেন পাপ্পু, আনোয়ার উদ্দিন বাপ্পী অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, আজাদ খান অভি, নুরুল কবির ও শাহেদ আলী রানাদের সম্ভাবনাও থাকবে প্রবলভাবে। এছাড়া আলোচনায় আছে দেবাশীষ আচার্য্যের নামও। তিনি সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সম্মেলনের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট জিয়াউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখনও এই বিষয়ে নিশ্চিত নই। এসব কিছু কাউন্সিলেই নির্ধারণ হবে। তবে কাউন্সিলরদের ভোট নেওয়া সম্ভব না হলে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি কাউন্সিলরদের থেকে নাম নিয়ে, সাবজেক্ট কমিটি করে নেতৃত্ব নির্বাচন করার। এমনটা হলে দীর্ঘদিন যারা সংগঠনে ত্যাগ শ্রম দিয়েছে তারা মূল্যায়িত হবে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘদিন সম্মেলন নাই, সম্মেলন সচল করার লক্ষ্যে যে প্রক্রিয়া করলে সুবিধা হয় সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃবৃন্দ আছেন সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে কিভাবে কী করা যায় সেটা ঠিক করবো আমরা।’

কাদের গুরুত্ব দিয়ে কমিটি করা হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ হচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটা সংগঠন। এখানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ যারা ছিল , যারা ছাত্রলীগ করে দীর্ঘদিন যাবৎ পদ পদবি ছাড়া আছে। আমরা সাধারণত তাদের গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর বিগত কমিটিতে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ার কারণে মূল্যায়িত হয়নি তাদের সকলের বিষয় দেখেশুনে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হচ্ছে। এখানে একটা সুন্দর স্ট্রাকচার দাঁড় করানোই আমাদের লক্ষ্য। আমরা তো সিভিও নিয়েছি।’

এদিকে দীর্ঘ ২১ বছর সম্মেলন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কেবিএম শাহজাহান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথম দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাঠামো দাঁড় করানোর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। খুব বেশি নেতাকর্মী এই সংগঠনের বিষয়ে আগ্রহী ছিল না। শুধু সংগঠন সম্পর্কে বোঝাতেই আমাদের কয়েক বছর লেগেছে। এরপর তো বিএনপি ক্ষমতায় এলো। আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে সাতটা বছর। এর পরেও আমরা সম্মেলন করতে প্রস্তুত ছিলাম। কেন পারিনি— সেটা দলীয় ফোরামে বলেছি। আমাদের আগ্রহের কোনো ঘাটতি ছিল না। থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটি সম্মেলন দিতে বলার ২৩ দিনের মাথায় আমরা সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারতাম না।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!