চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগে গৃহদাহ—কমিটি নিয়ে অসন্তোষ, ইমুকে নিয়ে ক্ষোভ

ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আগ্রাবাদে একটি শিপিং কোম্পানিতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন। সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা আছে। এছাড়া বর্তমান কমিটির অনেক নেতা বিবাহিত।

কমিটি ও সম্মেলন বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর বক্তব্যের জের ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। এ অবস্থায় ইমরান আহমেদ ইমুর অব্যাহতি চেয়েছেন তারা।

মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে আ জ ম নাছিরের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে তারা দাবি করেন, বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ নগর কমিটির অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করছেন। তাই ছাত্রলীগের সংগঠনের কর্মকাণ্ডে তারা সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। এর ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে।

chittagong-city-chatraleague
১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে আ জ ম নাছিরের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

এ সময় নেতারা অভিযোগ করেন, কোন্দলের জের ধরে সংগঠনের সদস্য নাছিম আহমদ সোহেলকে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছুদিন পর আবারও কোন্দলের জেরে সংগঠনের সহসম্পাদক সুদীপ্ত দাশকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। বর্তমান কমিটি আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণসহ সরকারি কাজে বাধা দিয়ে গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করেছে।

তারা বলেন, বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগকে বারবার কলঙ্কিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের সময় চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ‘বহিষ্কৃত’ সাধারণ সম্পাদক অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে বিজিবির হাতে গ্রেফতার হন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। কোচিং সেন্টারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রলীগের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধরের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

তারা আরও অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আগ্রাবাদে একটি শিপিং কোম্পানিতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন। সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা আছে। এছাড়া বর্তমান কমিটির অনেক নেতা বিবাহিত।

ওই মানববন্ধনে বক্তারা বর্তমান কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।

গত কয়েকদিন ধরে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে নগর ভবনে মেয়রের কাছে ধর্না দিতে দেখা যাচ্ছে। গতকালও নগর ভবন চত্বরে অপেক্ষমাণ মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা ইমরান আহমেদ ইমুর তীব্র সমালোচনা করছিলেন।

জানা যায়, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যমুনা টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুসারে বিবাহিতরা ছাত্রলীগের পদ পাবে না। তবে পদ পাওয়ার পর বিয়ে করতে কোন বাধা থাকবে না। এছাড়া নগর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইমরান আহমেদ ইমু।’

মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, পদবি পাওয়ার পর বিয়ে করলে কোন বাধা থাকবে না – ইমরান আহমেদ ইমুর এমন বক্তব্য ঠিক নয়। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ ছাড়া নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না।

মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিক সংগঠন। ছাত্রলীগের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস আছে। বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়াতে এই কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে কোন কলেজ কমিটি দিতে পারেনি। সিটি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ হয়েছে প্রায় ১৪ বছর, এমইএস কলেজে ১৮ বছর রানিং, ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ হয়েছে ১৫ বছর। কমিটি দিতে নগর ছাত্রলীগ ব্যর্থ হয়েছে। নগর ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ৬-৭ বছর হয়ে গেছে। পদ-পদবি না পাওয়ার কারণে অনেক মেধাবী ছাত্রনেতা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই উনার (ইমু) বক্তব্য ঠিক হয়নি। এছাড়া উনি (ইমু) তো ছাত্রলীগের ব্যাপারে কথা বলবে। অন্যান্য সংগঠনের ব্যাপার প্রশ্ন করার উনার এখতিয়ার নেই। ছাত্রলীগের কমিটি কখন হবে এটার জবাব দেবেন তিনি।’

এ বিষয়ে নগর ছাত্রলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাছির উদ্দিন কুতুবী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ করতে হলে ছাত্রত্ব থাকতে হবে। বিয়ে-সংসার এবং ছাত্রলীগ এক সাথে চলতে পারে না। উনার (ইমু) যেহেতু ছাত্রত্ব নেই, তাই তাকে পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘কমিটি নিয়ে উনাদের যদি কিছু জানার থাকে, তাহলে উনারা যেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। আর একজন আওয়ামী রাজনীতিবিদ হিসেবে আামি আওয়ামী লীগের সম্মেলন চাইতে পারি।’

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর এক বছর মেয়াদী ছাত্রলীগের নগর কমিটি গঠন করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০১৪ সালে মেয়াদ শেষ হলেও এতোদিন ধরে এই কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!