চট্টগ্রাম নগরী মিনি সাগরে পরিণত

চট্টগ্রাম নগরী মিনি সাগরে পরিণত 1এহসান আল-কুতুবী : একদিনের বর্ষণে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মিনি সাগরে পরিনত হয়েছে । বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সর্বমহলে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

শুক্রবার(২১ এপ্রিল) সকাল ছয়টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। অধিকাংশ বাসাবাড়ির নীচতলায় ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। অনেক দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
সামান্য বৃষ্টিতে নাগরিক জীবনের যে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আগামী বর্ষায় এর চেয়েও তীব্র জলাবদ্ধতার দু:সহ বিড়ম্বনার আশঙ্খা করছেন নগরবাসী। তারা দ্রুত এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরনে চাক্তাই খালসহ নগরীর খালগুলো দ্রুত খনন ও নালার গভীরতা বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন ।

সূত্র মতে, সামান্য বর্ষনে নগরীর আগ্রাবাদ বানিজ্যিক এলাকা, এক্সেস রোড, ছোটপুল, শান্তিবাগ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারী পাড়া, মুহুরী পাড়া, সিজিএস কলোনী. হালিশহর হাউজিং এষ্টেট, মুরাদপুর, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া, চকবাজার কাঁচাবাজার, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, নাছিরাবাদ, পতেঙ্গা, দেওয়ানবাজার ও কালুরঘাট শিল্পাঞ্চল সহ বিস্তীর্ন এলাকা তলিয়ে যায়।
এবারের বর্ষনে যে সব স্থানে কোনদিন পানি উঠেনি সে ধরনের অনেক এলাকায়ও নালা উপচে সড়কে পানি গড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকার সাধারন মানুষ জানান, সামান্য বর্ষনে নাগরিক জীবনে এমন নাজুক পরিস্থিতি হলে বর্ষায় চট্টগ্রামবাসীকে নৌকা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে । তারা দ্রুত এ সমস্যা থেকে উত্তরনে সংশ্লীষ্টদের আহবান জানান ।

গত কয়েক বছরে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দেশের প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র চাক্তাই খাতুনগঞ্জে কোটি কোটি টাকার মজুদ পণ্য নষ্ট হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

সকল মহলের একমাত্র প্রানের দাবী ছিল, ’মহেশখালের মুখে স্যুইচ গেইট নির্মান’ করতে হবে। এতে করে কোন এলাকা প্লাবিত হবার সম্ভাবনা থাকবে না। অপরদিকে মহেশখালের, আশপাশের এলাকার জনসাধারনের মতে, মহেশখালের মাঝখানে বন্দর রিপাবলিক ক্লাব সংলগ্ন অস্থায়ী বাঁধ নির্মানের ফলে গোটা মহেশখাল এখন ভরাট হয়ে মাঝখানে গাছপালা গজিয়ে উঠেছে। জমাট বাধা ময়লা আবর্জনার দুর্ঘন্ধে এসব এলাকার বাড়িঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মশার উপদ্রুব। জলাবদ্ধতা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি দুর্বিষহ সমস্যা।

জানা যায়, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে, খাল ও নালা নর্দমা ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে নগরীর আবর্জনা যেমন রয়েছে, তার চেয়ে বেশি দায়ী পাহাড় বেয়ে আসা মাটির শ্রোত। নি:সন্দেহে এটি একটি প্রাকৃতিক সমস্যা, যা নগরবাসী বয়ে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া নগরজুড়ে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং যত্রতত্র ভবন নির্মানও কম দায়ী নয়। চট্টগ্রাম নগরীতে ছোট বড় ১১৮টি খাল রয়েছে। ১৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এসব খালের মধ্যে এখনও ১১০ কিলোমিটার খালের পাড় কাচা। চট্টগ্রামের দু:খ খ্যাত এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৮৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি এপ্রিল মাসে। এর মধ্যে অতিবৃষ্টির পাশাপাশি রয়েছে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের শঙ্কা। আবার বঙ্গোপসাগরের নিন্মাঞ্চল থেকে হতে পারে ঘুর্নিঝড়। সম্ভাবনা রয়েছে বজ্রবৃষ্টির। সব মিলিয়ে মাসটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করছে আবহাওয়াবিদরা। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের কারনে সৃষ্ট জলোচ্ছাসও দীর্ঘমেয়াদী রুপ নিতে পারে ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!