চট্টগ্রাম থেকে রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাবে কনটেইনার

স্থলবন্দর চালুর অপেক্ষা, করোনায় গতি ধীর

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে যাবে কনটেইনার। বন্দর থেকে ট্রানজিট নিয়ে ভারতে পণ্য নেওয়ার এটিই সবচেয়ে কাছের স্থলবন্দর। তবে করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে কাজের ধীরগতি।

জানা গেছে, এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণের কাজ। শুরু হয়নি অবকাঠামো নির্মাণও। এটি নির্মাণ হওয়ার পরপরই শুরু হবে রামগড় সাব্রুম স্থলবন্দরের কার্যক্রম। বাংলাদেশের ১৫তম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম এই স্থলবন্দর চালু হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সাথে সেভেন সিস্টারখ্যাত তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি অনুন্নত রাজ্যের ‘গেটওয়ে’ হিসেবে দেখছে মৈত্রী সেতুটিকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের ভুমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে সম্প্রতি। ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণকাজ চালু থাকলেও বন্দরের অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ এখনও শুরু হয়নি।

চট্টগ্রাম থেকে রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাবে কনটেইনার 1

সরেজমিন ঘুরে রামগড়ের মহামুনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু-১ এর কাজ চলছে। ভারতের অংশে কাজের পাশাপাশি বাংলাদেশের রামগড় অংশেও সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান। সেতুর কাজ চললেও স্থলবন্দরের অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনও কাজ চোখে পড়েনি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থলবন্দর ও সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমির মালিকানা দাবি করে এক ব্যক্তি আদালতে রিট করেছেন। এ কারণে আদালতের নির্দেশে অধিগ্রহণকৃত ভূমির অন্যান্য মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ অংশে স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।

স্থলবন্দরের পাশের রামগড় চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে দুই দেশ লাভবান হবে। আমাদের যেসব পণ্য ভারতে চাহিদা রয়েছে সেসব পণ্য এখান থেকে পাঠানো যাবে। আবার ভারতের অনেক পণ্য যেমন— চাসহ কৃষি পণ্য, মসলা জাতীয় সব পণ্য আমাদের দেশে আনা যাবে। এতে আমরাও লাভবান হবো।

রামগড়ের স্থানীয় সংবাদকর্মী নেজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, এখন করোনা মহামারিতে স্থল বন্দরের কাজ অনেকটা থেমে আছে। এখানে সব কাজই ভারতীয় ঠিকাদাররা করছেন।

তথ্যমতে, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে রামগড় মহকুমা দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে সাব্রুমের যোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতার পর তা বন্ধ হয়ে গেলেও দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ভারতের সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর।

২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর শুরু হয় দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে বন্দরের কার্যক্রম নিয়ে একাধিক বৈঠক।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেনী নদীর খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম অংশে ১২৮ কোটি ৬৯ লাখ ভারতীয় মুদ্রায় ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রানজিট নিয়ে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়িক কাজে অর্থ ও সময় সাশ্রয় করতে পারবে। ভারত এ বন্দর ব্যবহার করলে নানা সুবিধা পাবে আমাদের দেশের মানুষ। রামগড় স্থলবন্দর দিয়েই ভারতে যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া দুই দেশের পর্যটন খাতও বিকশিত হবে।’

প্রসঙ্গত, রামগড় স্থল বন্দরের জন্য আলাদা কয়েকটি প্রকল্পে সড়কের কাজ ও ব্রিজের কাজ করছে সরকার। এরমধ্যে হাটহাজারী থেকে ফটিকছড়ি ৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ব্রিজের ৩৯৯ কোটি টাকা এবং ফটিকছড়ির ফেলাগাজির দীঘি থেকে হেঁয়াকো ৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ব্রিজের জন্য ২৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। আবার রামগড় হেঁয়াকো করেরহাট প্রকল্পে সড়ক ও ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!