চট্টগ্রাম থেকেই বিমান যাবে চীন-জাপান-থাইল্যান্ডে

বিমানবহরে আসছে সোনার তরী ও অচিন পাখি

বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার। এগুলো এলেই চট্টগ্রাম থেকে বন্ধ থাকা চীন-জাপান-থাইল্যান্ড রুটে ফ্লাইট চালু করবে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে পূর্বমুখী ফ্লাইট বন্ধ থাকা নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন বছরে আবার ভারতের চেন্নাই ও চীনের গুয়াংজুর পাশাপাশি ব্যাংকক হয়ে জাপানে যাবে বিমান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, জানুয়ারি থেকে ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট চালু করা হবে। এছাড়াও সৌদি আরবেও ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হবে। নতুন বছরে ভারতের চেন্নাই ও চীনের গুয়াংজুর পাশাপাশি ব্যাংকক হয়ে জাপানে যাবে বাংলাদেশ বিমান।

এর আগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পূর্বমুখী রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আবার চালুর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে সম্প্রতি চিঠি দেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এক দশক আগেও চট্টগ্রাম থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যাংকক রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু ছিল, যা পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। একসময় থাই এয়ারওয়েজ ও ফুকেট এয়ারলাইন্স নিয়মিত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা এ রুটে কোনও ফ্লাইট পরিচালনা করছে না।’

কিছুদিন আগে বেসরকারি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম-ব্যাংকক রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে। বর্তমানে তা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী, পর্যটক ও চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী সরাসরি থাইল্যান্ড যেতে না পেরে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সরাসরি চট্টগ্রাম-ব্যাংকক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ওই রুটে ভ্রমণকারী ব্যবসায়ী, পর্যটক ও রোগীরা বিপাকে পড়েছেন বলে চেম্বার সভাপতি চিঠিতে উল্লেখ করেন।

এদিকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আরও দুটি ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ উড়োজাহাজ যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ‘সোনার তরী’ আসবে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এবং ‘অচিন পাখি’ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) একই সময়ে ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এ নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮-তে।

বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার জানান, উড়োজাহাজ দুটির নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দুটি ড্রিমলাইনার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এ দুটি ড্রিমলাইনারসহ বিমানের মোবাইল অ্যাপ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি।

উড়োজাহাজ দুটি দেশে পৌঁছালে চট্টগ্রাম থেকে পূর্বমুখী রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আবার চালুর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তাহেরা খন্দকার।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সরওয়ার ই জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী। চট্টগ্রাম থেকে পূর্বমুখী রুটে বন্ধ থাকা ফ্লাইট চালু করা এখানকার ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এ রুটে ফ্লাইট চালু হলে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আরও জমজমাট হবে।’

জানা গেছে, দুটি ড্রিমলাইনার দিয়ে লন্ডনের হিথ্রোর পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া ম্যানচেস্টার রুটে আবার যাবে বিমান। এদিকে সিভিল এভিয়েশন ‘ক্যাটাগরি ওয়ান’ না হওয়ায় সহসা নিউইয়র্কে ফ্লাইট চালু হচ্ছে না। এ কারণে বাড়ানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট।

২০০৮ সালে করা চুক্তি অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বিমানকে সর্বশেষ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’ বুঝিয়ে দেয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। এরপর এত কম সময়ে কোনও উড়োজাহাজ পাওয়ার চিন্তা করেনি সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনের হাইনান এয়ারলাইন্স দুটি ড্রিমলাইনার কেনার অর্ডার বাতিল করলে সুযোগটি লুফে নেয় বাংলাদেশ। বর্তমানে লন্ডন রুটে সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট চালু আছে। ২৯৮ আসনের দুটি ‘সেভেন এইট সেভেন নাইন’যোগ হলে ৫ জানুয়ারি থেকে লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে সাত দিন যাবে বিমান। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য রুটেও বাড়বে ফ্লাইট।

এদিকে সহসা নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু না হলেও মার্চেই ম্যানেচস্টার হয়ে টরোন্টো ফ্লাইট চালুর অনুমোদন মিলবে প্রত্যাশা সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যানের।

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘নিউইয়র্কে ফ্লাইট চালু করার জন্য আমরা কথা বলেছি। আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পারবো।’

বর্তমানে বহরে থাকা ১৬টি উড়োজাহাজ দিয়ে ১৬টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করছে বিমান। দুটি ড্রিমলাইনার এসে গেলে উড়োজাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮টি। পর্যায়ক্রমে শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালদ্বীপের রাজধানী মালে ও সিডনিসহ বেশ কিছু নতুন রুটে পাখা মেলার পরিকল্পনা আছে বিমানের।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!