চট্টগ্রাম টেস্ট হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের

তৃতীয় দিনের চা বিরতির সময় আফগানরা এগিয়ে ২৯৩ রানে

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুর ত্রিশ মিনিটের মধ্যে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চারটি উইকেটের পতন দেখে সবাই। যার মধ্যে প্রথম দুটি বাংলাদেশের এবং অন্য দুটি আফগানিস্তানের। আগের দিনের ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের প্রথম ওভারটা শুরু করেন আফগানিস্তানের অফস্পিনার মোহাম্মদ নবী। আর তৃতীয় ডেলিভারিতেই তিনি ফিরিয়ে দেন তাইজুলকে। ৫৮ বল মোকাবেলায় ১৪ রান করা কাটা পড়েন পরিষ্কার বোল্ড আউটে। এর দুই ওভার পর রশিদ খানের দারুণ এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে বসে প্যাড দিয়ে ঠেকিয়ে দেন নাইম হাসান। আম্পায়ারও আঙুল তুলতে দেরি করেননি। রিভিউ নিলেও তাতে কাজ হয়নি।

আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে আশা জাগিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। টানা দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে আফগানিস্তানকে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলপতি। তবে ৪ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানরা এরপর ভালোভাবেই লড়াইয়ে ফিরেছে। এরপর দৃশ্যপটে নাঈম হাসান। সকালে নিজের দ্বিতীয় ওভারে নাঈম হাসান বাংলাদেশ শিবিরে আনন্দ এনে দেন। হাসমতউল্লাহ শহীদি তার বলে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন। মিডলস্ট্যাম্পে পড়া বলটা বাঁক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শহীদির ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের বিশ্বস্ত হাতে। চলতি টেস্টে স্লিপ কর্ডনে এটি সৌম্য সরকারের তৃতীয় ক্যাচ।

এরপর একটা করে ওভার হচ্ছে আর সাকিব আল হাসান মাঠের পশ্চিম দিকের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাচ্ছেন। স্কোর দেখার সঙ্গে সঙ্গে টেনশন বাড়ছে তার। আফগানিস্তানের প্রতিটা রানেই যে চট্টগ্রাম টেস্ট এখন বাংলাদেশের জন্য ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। তৃতীয়দিন দ্বিতীয় ইনিংসে চা পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৫৬ রান। চা বিরতির ত্রিশ মিনিট আগে আসগর আফনান ১০৮ বলে ১২৩ মিনিট উইকেটে থেকে চার বাউন্ডারি আর জোড়া ছয়ে বরাবর ৫০ রান করে তাইজুলের প্রথম শিকারে পরিণত হন। আসগর প্রথম ইনিংসেও ফিফটির (৯২ রান) দেখা পেয়েছিলেন। আউট হওয়ার আগে আসগর সতীর্থ ইবরাহিম জাদরানের সাথে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৮ রান সংগ্রহ করেন। ইবরাহিম জাদরান অপরাজিত আছেন ৮২ রানে। তার সাথে ৪ রান নিয়ে আছেন আফসার জাজাই।

চা পানের বিরতির সময়ে ম্যাচে এখন তাদের লিড ২৯৩ রানের। আফগান ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাট করছেন তাতে করে বাংলাদেশের সামনে অনতিক্রম্য এক পাহাড় দাঁড়াচ্ছে কোন সন্দেহ নেই। কোনো সন্দেহ নেই এই টেস্টের চতুর্থ এবং শেষ ইনিংসে বাংলাদেশের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ম্যাচের দ্বিতীয়দিন থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্পিন বেশ ভালোই বাঁক নিচ্ছে। স্পিনাররা দাপট দেখাচ্ছেন। আর রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের সামনে তিন শতাধিক রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা এক কথায় প্রায় অসম্ভব। তাই বলা যায় চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশের হাতছাড়াই হয়ে গেল।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, যে উইকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা টিকে থাকতে নাভিশ্বাস উঠে যায় সেখানে টেস্ট ক্রিকেটে একেবারে শিশু আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কি অবলীলায় উইকেটে থেকে রান করে যাচ্ছেন। দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও যে রকম ধৈর্য্য আর কৌশল নিয়ে ব্যাট করে চলেছে তাতে করে বাংলাদেশের ভবিষ্যত ক্রিকেট বড়ই ভুল পথে হাঁটছে বলে প্রতীয়মান হয়। ক্রিকেটের নবীশ এই দলটি টাইগারদের শেখাচ্ছে কিভাবে ধৈর্য্য দেখিয়ে টেস্ট খেলতে হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!