চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিন উইকেট দিয়েই স্বাগত আফগানদের

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট

বেশ কদিন আগেই ঢাকা থেকে উইকেটের রেসেপি চলে আসে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সবমিলিয়ে উইকেট রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে পাঁচ নম্বর উইকেটেই হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট। যে উইকেটটিতে সর্বশেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্পিন বিষে বোকা বানানো হয়েছিল। সবার উৎকণ্ঠা কেমন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট? প্রশ্নের অফিসিয়াল উত্তর পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আইসিসির বিধিনিষেধ থাকায় উইকেট নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন পিচ সংশ্লিষ্ট সবাই। তবে ‌’অফ দ্য রেকর্ড’ কিছু তথ্য হয়তো পাওয়া যায়, আর বাকিটা উইকেটের চেহারা দেখে। ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ বরাবর শুরুতে এক-দুই বা তিনদিন কিছুটা ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি থাকে। তারপর যত সময় গড়ায় তত স্লো হতে থাকে। বল একটু-আধটু টার্নও করে।

একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানেই মিলবে সে সত্যের দেখা। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টেস্টে ৯ বার ৫০০ থেকে ৬০০ রান করেছে। তার তিনটিই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। আর স্পিন ট্রাস্প কার্ড সাকিবের ইনিংস সেরা বোলিং স্পেলটিও এই মাঠেই (২৫.৫-৭-৩৬-৭), নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে এখানে ১৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ভেন্যুতে নিজেদের ১৯তম ম্যাচ খেলতে নামবে। এর আগের ১৮টি ম্যাচের মাত্র ২টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮৬ রানে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় জয়টি আসে এই মাঠে খেলা সর্বশেষ টেস্টটিতে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬৪ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যে ম্যাচে মুমিনুলের শতকের পর নাঈম আর তাইজুলের স্পিন ফাঁদে পড়ে ২০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৩৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়া ছয়টি টেস্ট ড্র ও ১০টি ম্যাচে হারের স্বাদ নেয় টাইগাররা।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ শ্রীলঙ্কার। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৫৯৯ রান করেছিলো ইংলিশরা। শেষ পর্যন্ত ঐ সিরিজের প্রথম টেস্টটি ১৮১ রানে জিতেছিলো ইংল্যান্ড। এই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারার। ২০১৪ সালে ৩২টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৪৮২ বলে ৫৫১ মিনিট ক্রিজে ব্যাট করে ৩১৯ রান করেন সাঙ্গা। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ম্যাচটি ড্র হয়েছিলো। এখানে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলেন মোমিনুল হক। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭৪ বলে ১৮১ রান করেন তিনি। তার ৩৭৭ মিনিটের ইনিংসে ২৭টি চার ছিলো। ঐ ম্যাচটিও ড্র হয়েছিলো।

প্রধান কিউরেটর প্রবীনকে নিয়ে ম্যাচের আগের দিন উইকেট দেখছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
প্রধান কিউরেটর নবীনকে নিয়ে ম্যাচের আগের দিন উইকেট দেখছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

তবে, স্পিন আক্রমণে সাফল্য আসায় এখন বেশ বদলে গেছে বাংলাদেশের উইকেটও। সংবাদ সম্মেলনে সাকিবও স্বীকার করলেন, ‌’আগে আমরা টেস্ট খেলতাম পাঁচ দিনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। এখন আমরা জেতার জন্য খেলি। আর সেজন্য স্পিন উইকেটে জয় আসলে মন্দ কি! আমাদের স্পিনারদের কোয়ালিটি আছে তাদের ২০ উইকেট নিয়ে নেয়ার।’ সাকিবের কথার সত্যতা হয়তো মিলতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্টে। আবারও স্পিনিং উইকেট বানিয়ে জয়ের জন্য ঝাপিয়ে পড়বেন সাকিব, মিরাজ, তাইজুল আর নাঈমরা।

উইকেট নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন করা হলেও কোন কথায় বলতে রাজি হননি পিচ কিউরেটর। তবে বিকেলে তিনি যেন সব সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন বল হাতে। টেস্ট শুরুর আগের দিন বুধবার বিকেলে হঠাৎ পিচের কাভার তুলে ফেলা হলো। ড্রেসিংরুম প্রান্ত থেকে পিচের ওপর দৌড়ে একজন বোলিং করছেন। অফস্পিন বোলিং! -কে তিনি? পরিচয় জানা গেল। তিনি এই মাঠের প্রধান কিউরেটর। নাম প্রবীন হিঙ্গানিকার। ভারতের বিধর্ভ ক্রিকেট রাজ্যের সাবেক অধিনায়ক তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে এখন চাকরি করছেন। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিসিবি তাকে প্রধান কিউরেটর পদে চাকরি দিয়েছে। এই উইকেট তৈরির প্রধান দায়িত্ব তার।

চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট কেমন হবে সেই বিষয়ে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের পরামর্শ পেয়েছেন তিনি। উইকেটে যে কয়টি অফস্পিন করলেন প্রবীন হিঙ্গানিকার, তাতেই বোঝা গেলো দায়িত্বটা সুচারুভাবেই পালন করেছেন তিনি! তার নিরীহ দর্শন স্পিন উইকেটে পড়েই প্রায় ১৬০ ডিগ্রী বাঁক নিলো! যাকে বলে সার্প টার্ন!

ম্যাচ শুরুই হয়নি। অথচ সেই উইকেটে ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে বোলিং করার ঘটনা টেস্ট ক্রিকেটে সচারচর দেখা যায় না। কিন্তু প্রবীন যেহেতু এই মাঠের প্রধান কিউরেটর। পিচের দেখভালের প্রধান রক্ষক। তাই এখানে শুধু বোলিং কেন-দাপাদাপি করার ক্ষমতাও তার আছে!

যে কয়টি বল করলেন প্রবীন, সবগুলোই একহাতের বেশি টার্ন করলো! সেই টার্ন দেখে দূরের কাঁচঘেরা প্রেসবক্সের ভেতর থেকেও প্রবীনের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ঠিকই দেখা গেল-যাক যা চেয়েছিলাম, ঠিক সেই উইকেটই হয়েছে তাহলে! দিনের শুরুতে বাংলাদেশ কোচ সাকিব আল হাসান ও কোচ রাসেল ডমিঙ্গো উইকেট পর্যবেক্ষণ করেন বেশ ভালোভাবে। উইকেটে হাত দিয়ে দেখে উত্তাপ নিলেন যেন! চাহিদায় যা দেয়া হয়েছিলো-তা নির্মিত হলো কিনা? সেটাই বোঝার চেষ্টা করলেন সাকিব।

হাতের স্পর্শেই যা বোঝার বুঝে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কোনো সন্দেহ নেই চট্টগ্রামের এই উইকেটে ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে বল ঘুরবে ঘুর্ণির মতো! এমন উইকেট মানেই একাদশে এক পেসার এবং চার স্পিনার!

সংবাদ সম্মেলনে আফগান অধিনায়ক রশিদ খানকেও উইকেটের ‘চরিত্র’ বিশ্লেষণ করতে বলা হলো। তবে রশিদ খান আগাম তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত জানানোর চেয়ে ক্রিকেটীয় যুক্তির পথেই হাঁটলেন-‘আমি আসলে উইকেট নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা করি না। আর উইকেট কেমন আচরণ করবে, সেটা সেই উইকেটে বল না করা পর্যন্ত বলতে পারি না!’

তবে চট্টগ্রামের উইকেটের আচরণ জানার জন্য আফগান অধিনায়ক অনুশীলন পর্বে যা করলেন সেটাও প্রায় অদ্ভুত! দুপুরে কিউরেটরের উপস্থিতিতে পিচ কাভার তুলে দেখলেন। উইকেটে হাত রাখলেন। হাঁটু গেড়ে বসলেন। এবং খানিকবাদে পুরো শুয়ে পড়লেন! আক্ষরিক অর্থেই শুয়ে পড়া! এখন দেখার বিষয় কাদের স্পিন আক্রমণে কারা শুয়ে পড়ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!