চট্টগ্রাম টেস্টে সাদমানের পর সাকিব-লিটনের ব্যাটে দিনপার বাংলাদেশের

ঘরের মাঠে হাসেনি তামিমের ব্যাট

দিনের শুরুটা যদি হয়ে থাকে সাদমান ইসলামের তাহলে শেষটা সাকিব ও লিটনের। মাঝখানে দারুণ কিছুর আশা জাগিয়েও ‘অপমৃত্যু’ হয় মুশফিকের। তবে দিনের প্রথম দুই সেশনেই দুই উইকেট করে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ভয়ে ফেলে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

প্রথম দুই সেকশনে জোড়া উইকেট হারানো বাংলাদেশ শিবিরে যে শঙ্কা জাগে শেষ সেশনে তা সত্যি হয়নি। শেষদিকে উইকেট পড়েনি। দুটি নয়, তৃতীয় সেশনে একটি উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে দিন শেষ হয়েছে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে। দ্বিতীয় দিনকে ঘিরে কিছু আশা নিয়ে।

স্বস্তি বা আশা, সবই সাকিব আল হাসান আর লিটন দাসের ব্যাট ঘিরে। ৫ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে টেস্টের প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই টেস্ট দিয়েই লাল বলের ক্রিকেটে ফেরা সাকিব অপরাজিত আছেন ৩৯ রানে। আর এসেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা লিটন কাল দিন শুরু করবেন ৩৪ রানে থেকে।

একেকটা উইকেট পড়বে, তারপর একটা জুটি দাঁড়াবে। কিন্তু সে জুটি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে দেখাতেই আবার ভেঙে যাবে – তৃতীয় সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের গল্পটা ছিল এমনই। তখন পর্যন্ত পাঁচটি জুটি ভেঙেছে বাংলাদেশের ইনিংসে, এর মধ্যে তিনটিই ৫০ রানের আশপাশে গিয়ে ভেঙে গেছে। দুটি অর্ধশত পেরোনোর একটু পরই, একটি অর্ধশত ছোঁয়ার আশা জাগিয়ে। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-লিটনের জুটি এখন অবিচ্ছিন্ন আছে ৪৯ রানে।

প্রথম দুই সেশনেই শেষ দিকে তো উইকেট পড়েছেই, আরও মিল, ওই দুই উইকেটই বাংলাদেশকে আক্ষেপ জাগাবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে নাজমুল হোসেন রানআউট হলেন ওপেনার সাদমান ইসলামের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৩ রানের জুটি গড়ার পর। আর চা বিরতির আগে সাদমান এলবিডব্লু হলেও পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন তিনি!

তৃতীয় সেশনে মুশফিক আর সাকিব – দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ওপরই ভরসা ছিল বাংলাদেশের। ভরসার প্রতিদান দারুণভাবেই দিচ্ছিলেন দুজন! সাকিবকে বেশ কবার এগিয়ে এসে মারতে দেখে তিনি কতটা স্বস্তিতে আছেন ক্রিজে, তা নিয়ে সংশয় জেগেছিল বটে, কিন্তু মুশফিক ও সাকিব দুজনই ঠিকই ৫০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে রান তুলে যাচ্ছিলেন। ৪ উইকেটে ১৪০ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশকে এ দুজন তৃতীয় সেশন কোনো বিঘ্ন ছাড়াই পার করিয়ে দেবেন, এমনটাই আশা ছিল সবার। কিন্তু তা আর হলো কই!

৭২তম ওভারের প্রথম বলে ক্রেইগ ব্রাথওয়েইটকে চার মেরে জুটিতে ‘ফিফটি’ পূর্ণ করলেন মুশফিক। ১০৮ বলের জুটিতে সপ্তম চার ছিল সেটি। ওই ওভারেরই শেষ বলে ব্রাথওয়েইটকে আবার চার মারেন মুশফিক। বাংলাদেশ তখন ২০০ ছোঁয়ার অপেক্ষায়।

সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার আগে ধাক্কা হয়ে এল মুশফিকের উইকেট। ৭৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়ারিকানের বলে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে। সেখানে কর্নওয়াল ধরেছেন দারুণ ক্যাচ। বাংলাদেশের পাঁচ উইকেটের তিনটিই নিয়েছেন ওয়ারিকান।

এর আগের দুই সেশনেই খেলা হয়েছে ২৯ ওভার করে। দুই সেশনেই বাংলাদেশের ২টি করে উইকেট তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ রান তুলেছে ৬৯, দ্বিতীয় সেশনে ৭১।

প্রথম সেশনে ২ উইকেটে ৬৯ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে সাদমান-মুমিনুলের ব্যাটে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৫০ রান তুলে ফেলেছিল। কিন্তু চা বিরতির ঠিক আগে ৩৩ বলের মধ্যে একে একে আউট মুমিনুল ও সাদমান দুজনই। ৫১তম ওভারের পঞ্চম বলে ওয়ারিকানকে লেগ সাইডে মারতে গিয়েই শর্ট মিড-উইকেটে ধরা পড়লেন মুমিনুল। এরপর সাদমানকে ঘিরে ওই আক্ষেপ। ৫৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন ওয়ারিকানের বলেই!

এর আগে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের হয়ে ৯ রান করে আউট হয়ে গেছেন তামিম ইকবাল। কেমার রোচের বল তাঁর ব্যাটে লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। এই ৯ রানে মুশফিকুর রহিমকে পেরিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান হয়ে যায় তামিমের, যদিও মুশফিক নেমেই আবার শীর্ষে উঠে গেছেন। এরপর সাদমানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুলের ৪৩ রানের জুটিতে বড় কিছুর স্বপ্ন ভেঙে যায় দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসঃ ৯০ ওভারে ২৪২/৫ (সাদমান ৮৯, তামিম ৯, নাজমুল ২৫, মুমিনুল ২৬, মুশফিকুর ৩৮, সাকিব ৩৯*, লিটন ৩৪*; রোচ ১/৪৪, গ্যাব্রিয়েল ০/৫১, কর্নওয়াল ০/৫৬, মেয়ার্স ০/১৬, ওয়ারিকান ৩/৫৮, ব্রাথওয়েইট ০/১৩)

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!