চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের ৫% কমিশনের নেতারা পেটাল রেল ঠিকাদারকে

রেলের ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি টেন্ডার জমা দিতে যাওয়ার পথে ঠিকাদারকে প্রথমে মারধর, এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হল রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা একটি বস্তিতে। সেখানে তাকে পিটিয়ে আহত অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঠিকাদার বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউরো বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চাঁদার দাবিতে নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন বর্মণ, অর্থ সম্পাদক হাসানুল আলম সবুজ এবং মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লিটন চৌধুরী রিংকু এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সানাউল হক নামে ওই ঠিকাদার।

এ সময় ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে টেন্ডারের স্যাম্পল, বিভিন্ন কাগজপত্র ছাড়াও নগদ এক লাখ সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ছাত্রলীগের এই নেতারা রেলওয়ের ঠিকাদারি যে কোনো কাজে ৫% চাঁদা দাবি করে থাকেন।

অভিযোগে জানা গেছে, টেন্ডার জমা দিতে আসা ওই ঠিকাদারকে প্রথমে পাথর দিয়ে মারা হয়। এরপর গাছ ও বাঁশ দিয়ে প্রচণ্ড প্রহার করে। এর একপর্যায়ে মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লিটন চৌধুরী রিংকু অস্ত্র বের করে গুলি করতে উদ্যত হলে ওই ঠিকাদার ‘আর কখনও রেলে আসবে না’ বলে আকুতি জানায়। এ সময় রিংকু জুতা দিয়ে ওই ঠিকাদারের মুখে লাথি মারে। এরপর তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা পাশের একটি বস্তিতে। সেখানেও তারা দা ও কুড়াল দিয়ে হামলা করতে উদ্যত হয়।

ঠিকাদার সানাউল হক জানান, বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে পাহাড়তলীতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে (সিসিএস) টেন্ডারের স্যাম্পল জমা দিতে গেলে এই হামলার ঘটনা হয়। এ সময় টেন্ডারের কাগজপত্র ও নগদ এক লাখ সাত হাজার টাকা তারা ছিনিয়ে নিয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘বুধবার (২৫ জুন) পাহাড়তলীতে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে ট্রেনের সার্টার কেনার টেন্ডারের শেষ দিন ছিল। ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার এ টেন্ডারের ‘এএনজেড এন্টারপ্রাইজ’ সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। বৃহস্পতিবার টেন্ডারের স্যাম্পল জমা দেওয়ার শেষ দিনে আমিসহ অনেকেই আসি। এ সময় আগে থেকে চাঁদা দাবি করে আসা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন করে। পরে আমার সাথে যারা ছিল তারা জাতীয় হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করলে খুলশী থানা পুলিশ এসে আহত অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে।’

এদিকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন বর্মন বলেন, ‘আহত সানাউল কোন ব্যবসায়ী নয়। তার নামে কোন ফার্মও নেই। বরং সুদীপ্ত হত্যামামলার আসামিদের সাথে নিয়ে টেন্ডারবাজি করতে এসে সে সাধারণ ঠিকাদার ও স্থানীয়দের জনরোষের কবলে পড়েই মার খেয়েছে। এতে আমাদের কোন ভূমিকা নেই।’

এ ব্যাপারে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি। পুলিশ গিয়ে উদ্ধারের কোন ঘটনাও আমার জানা নেই।’

এ ব্যাপারে রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করেছি। আমার অফিসের ভেতরে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আসলে এটি তাদের নিজেদের মধ্যকার লেনদেনের সম্পর্ক। এছাড়াও নিজেকে ভিকটিম দাবি করা সানাউলের নিজস্ব কোন ফার্ম নেই। অন্যের নামে একটি ফার্মকে নিজের বলে দাবি করেন। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের তিন গ্রুপ টেন্ডার কিনে তা টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করে ফেলেছে। কিন্ত সানাউল সমঝোতার জন্য চেয়েছেন ৫ লাখ টাকা। ছাত্রলীগের লিমন গ্রুপের লিমনের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পাঠালে সেটি সানাউল ফেরত দেন।’

তবে প্রশ্ন উঠেছে, সানাউলের নিজস্ব ফার্ম যদি নাও থাকে টেণ্ডারের জায়গায় চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন বর্মণ, অর্থ সম্পাদক হাসানুল আলম সবুজ এবং মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লিটন চৌধুরী রিংকুর কাজ কী?

এদিকে এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সানাউল আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন।

জেএস/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!