চট্টগ্রাম চেম্বার ঘিরে কোস্টার হেজ ঠিকাদারের শ্রমিকদের অবস্থান

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে চট্টগ্রাম কোস্টার হেজ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়ন।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এ আন্দোলন। পরে চেম্বারের পরিচালক অহিদ সিরাজ স্বপনসহ নেতৃবৃন্দ এসে শ্রমিকদের কথা শুনেন এবং বিষয়টি সুরহার জন্য আগামী সপ্তাহে বৈঠকের আশ্বাস দেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কোস্টার হেজ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটির ওভার সাইড, বর্হিনোঙরের মূল জাহাজ হতে কোস্টার, লাইটার জাহাজ, ট্রলার, বার্জ ও বোট ইত্যাদিতে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজ করেন।

১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারীকৃত নির্দেশনার আলোকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম কোস্টার হেজ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতির মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে দেন। চুক্তিতে শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণ করা হয় টন প্রতি ৯ টাকা।

২০০০ সালে মজুরী ১ টাকা বৃদ্ধি করে প্রতি টন ১০ টাকা মজুরী পুনঃনির্ধারণ করা হয়। চুক্তিটির কার্যক্রম ২০০৭ সালে দেশে জরুরী অবস্থা জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত চলছিল। জরুরী অবস্থা জারীর প্রেক্ষিতে চুক্তির কার্যক্রম ব্যহত হয়।

দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলে শ্রমিকরা কাজে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতি কোস্টার হেজ শ্রমিকদের কাজ দেওয়া কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

এদিকে ২০১৩ সালে জনৈক দরবেশ মোল্লা এবং সাঈফ নামে দুই জনকে চট্টগ্রাম কোস্টার হেজ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিকদের মজুরী ধরা হয় প্রতি টন ১ টাকা। বিষয়টি চট্টগ্রাম কোস্টার হেজ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নজরে আসলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সফি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত প্রায় ২ বছর বিচার কাজ শেষে মামলাটির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন । আদালত ২০১৩ সালের চুক্তিটি বাতিল করে ১৯৯৭ সালের চুক্তিটি পুর্নবহালের আদেশ দেন ।

বিবাদীপক্ষ উচ্চ পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করলেও উচ্চ আদালত চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের রায় বহাল রাখেন।

কৌশলে নিজেরা নিষ্ক্রিয় থেকে ডাব্লিউটিসি’র (ওয়াটার টান্সপোর্ট সেল) মাধ্যমে হেজ শ্রমিক নিয়োগ দিতে থাকেন। ডাব্লিউটিসি’র একটি কার্যাদেশের বিরুদ্ধে কোস্টার হেজ শ্রমিকরা সুপ্রীম কোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করেন। পরে ডাব্লিউ টিসিকেও অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর কোস্টার হেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জেবল হক বাণিজ্যমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কোস্টার হেজ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতির মধ্যে চুক্তিটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন হযনি। ফলে শ্রমিকরা আন্দোলনের ডাক দেন।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চেম্বার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন কোস্টার হেজ শ্রমিকরা। পরে চেম্বারের পরিচালক অহিদ সিরাজ স্বপন এসে শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের আশ্বাস দেন। এরপর শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে।

এএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!