চিড়িয়াখানা বদলে দিয়ে জনপ্রশাসন পদক পেল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যাপক উন্নয়ন করে দলগতভাবে জনপ্রশাসন পদক জয় করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ‘পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে’ অসামান্য অবদান রাখায় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামকে এই পদকে ভূষিত করা হয়।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেলে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাত থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এ পদক গ্রহণ করেন। দলগত শ্রেণিতে পাওয়া এ পদকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অন্য সদস্যরা হলেন চট্টগ্রামের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মমিনুর রশিদ, হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা.শাহাদাত হোসেন শুভ।

জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে ১১ ব্যক্তি, জেলা পর্যায়ে ৩৪ ব্যক্তি এবং উভয়পর্যায়ে একটি করে মোট দুইটি প্রতিষ্ঠান এ বছর জনপ্রশাসন পদকের জন্য মনোনীত হয়। প্রতিবছর ২৩ জুলাই জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন করা হয়।

জনপ্রশাসন পদক জয় করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
জনপ্রশাসন পদক জয় করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

পদক গ্রহণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই পদক চট্টগ্রামবাসীর, এই পদক চট্টগ্রামকে উৎসর্গ করলাম। চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতা থাকলে ভবিষ্যতে আমরা জাতীয় পর্যায়ে আরো সম্মান অর্জন করবো।’ তিনি জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীকে অভিনন্দন ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি তিন কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বদলে যাওয়ার গল্পটা শুরু তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিনের হাত ধরে। তারা সচেতনভাবে প্রাণিদের খাবার, দর্শনার্থীদের চিড়িয়াখানায় প্রবেশ ফির স্বচ্ছ হিসাবের মাধ্যমে আগের দূরবস্থা দূর করেন। অভিযোগ আছে চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহদের খাদ্য তালিকায় মাংস থাকলেও তাদের খেতে দেওয়া হতো আলু, পটল, মূলা জাতীয় সব্জি। ২০১৪ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব হওয়ার পর রুহুল আমিন কয়েকজন কর্মকর্তাকে অনিয়মের জন্য ছাটাই করেন। প্রথমেই প্রবেশ ফির ফান্ড বিশাল আকার ধারন করে। এক বছরের মাথায় সীমানা প্রাচীর তৈরি করার পাশাপাশি রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে আনা হয় সিংহ। জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বিদায়ের আগে সিংহ-সিংহির বিয়েও দিয়েছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে।

জনপ্রশাসন পদক জয় করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
জনপ্রশাসন পদক জয় করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

তারপর আফ্রিকা থেকে ক্রয় করা হয় বাঘ, জ্রেব্রা, উট পাখি, ইমু। ইতোমধ্যে সেই বাঘ বাচ্চাও দিয়েছে। কয়েকশ প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি নিয়ে গড়া হয়েছে এভিয়ারি পার্ক। ময়ুর, ঈগল, মদন টাক, ভূবন চিল, গ্রিফন শকুন, পানকৌড়ি, গো-বক, নিশিবক, কানি বক, ময়না, টিয়া, ধনেশ, তিতির, প্যারা হরিণ, মায়া হরিণ, সিংহী, সজারু, মুখপোড়া হনুমান, আরকান আর্মির ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণিতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন নগরবাসীর নির্মল বিনোদনের প্রিয় স্থান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চিড়িয়াখানা উদ্বোধনের পর টিকিটের মূল্য ছিল এক টাকা। পরবর্তীতে বৃদ্ধি করা হয় দুই টাকা। এভাবে পশু-পাখির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে টিকিটের দামও। বর্তমানে প্রতি টিকিটের দাম ৫০ টাকা।

১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান এবং চট্টগ্রামের অন্যান্য অভিজাত ব্যক্তিবর্গ প্রাথমিকভাবে ফয়’স লেকে চিত্তবিনোদন, শিক্ষা এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই চিড়িয়াখানা সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়।
শুরুর দিকে এক টিকিটেই চিড়িয়াখানা এবং ফয়’স লেকে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও ১৯৯৫ সালে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি বাড়তি লাভের বিষয়টি বিবেচনা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দুইটি আলাদা গেটে পৃথক টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশের ব্যবস্থা করে।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!