চট্টগ্রাম কাস্টমস—ঘুষ ছাড়া নড়ে না ফাইল, রাজস্ব কর্তার লেনদেনের হাতিয়ার ‘ফালতু’

'সে শুধু চা-নাস্তা খাওয়ার টাকা নেয়'—মন্তব্য রাজস্ব কর্মকর্তার

বহিরাগতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের এক রাজস্ব কর্মকর্তা অবৈধ লেনদেন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বহিরাগত কোন ব্যক্তি কাস্টমসের কাজ করার অনুমতি না থাকলেও শুল্কায়ন শাখা ৫ (বি) তে দীর্ঘদিন করে কাজ করে যাচ্ছেন হায়াত নামে এক ‘ফালতু’। কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগী বহিরাগত কর্মীরা ‘ফালতু’ নামে পরিচিত।

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ টাকা গুণেবুঝে নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে হায়াতকে নিযুক্ত করেছেন রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে হায়াত ‘শুধু চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা’ নেন বলে স্বীকার করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, কাস্টমস হাউসের চাকুরিভুক্ত নয় এমন লোক রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেনের সিল মেরে প্রতি ফাইলের জন্য এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। এ ‘ফালতু’ কন্ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য চালান খালাস করে নেন। কন্ট্রাকের অবৈধ টাকা কাস্টমস হাউসের বাইরে মনোনিত স্থানে অথবা যে কোন রেস্টুরেন্টে বসে লেনদেন করেন।

এছাড়া সব ধরণের কাগজপত্র ও পণ্য চালানের ঘোষণা, নথিপত্র ঠিকঠাক থাকলেও প্রতি ফাইল স্বাক্ষরের জন্য নেন এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কোন সিএন্ডএফ প্রতিনিধি টাকা দিতে না চাইলে অথবা গড়িমসি করলে গায়ে হাত তুলে টাকা কেড়েও নেন হায়াত।

এ বিষয়ে একজন সিএন্ডএফ কর্তকর্তা জানান, চালানের প্রকার ভেদে কম-বেশী হয়ে থাকে টাকার হিসাব। দর কষাকষির মাধ্যমে বদলে দেওয়া হয় এইএসকোড। মিথ্যা ঘোষণা থাকলেও সেটি ঠিক হয়ে যায় টাকাতেই। শুধু তাই নয়, সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও রাজস্ব কর্মকর্তার স্বাক্ষর শেষে টাকা দিতে হয় প্রতি চালানে। যা লেনদেন করতে হয় এ হায়াতের মাধ্যমে। কারণ রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুলের মনোনিত ব্যক্তি বহিরাগত এ হায়াত।

হায়াত যে ফাইলে স্বাক্ষর করতে বলেন সেখানেই স্বাক্ষর করেন ইমরুল। যা পূর্বেই আমদানিকারকের সাথে বনিবনা করে নেন হায়াত। সূত্রমতে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্কায়ন শাখা ৫ (বি)তে মেশিনারি, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা ও এইচএস কোড পরিবর্তনের বিষয় থাকলে অথবা মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় থাকলে তার জন্য বড় ঘুষ বরাদ্দ রাখতে হয় আমদানিকারককে। যে টাকা লেনদেন হয় কাস্টমস হাউসের বাইরে।

কাস্টমস সুত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কাজ করে যাচ্ছেন রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন। এর আগে তিনি কাস্টমেসর অডিট, ইনভেস্টিগেশন ও রিসার্চ (এআইআর) শাখায় রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে নানা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ তদন্তাধিন রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্কায়ন শাখা-৫ (বি) এর রাজস্ব কর্তকর্তা ইমরুল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হায়াত আমার শাখায় চা-নাস্তার আনা নেওয়ার কাজ করে। তার মাধ্যমে আমি টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তবে, চা নাস্তা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা পয়সা নেয়।’

তাঁর মাধ্যমে কন্ট্রাকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘টাকা পয়সা নেওয়ার বিষয়টি হয়তো কোন পক্ষ আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার বাপ্পি শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, বহিরাগত কাউকে দিয়ে কাস্টমসে কাজ করানোর সুযোগ নেই। টাকা পয়সা নেওয়ার বিষয়টিও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!