চট্টগ্রাম কারা হাসপাতালে ১৯ কোটির মেশিনে ধুলোর আস্তর, জনবলই নেই

পরীক্ষা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেলে, এক বন্দির জন্য লাগে দুজন কারারক্ষী

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালের ল্যাবে এক যুগ ধরে পড়ে আছে রোগীদের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার বিভিন্ন মেশিন। রোগীদের সেবা দিতে এসব মেশিন প্রায় ১৯ কোটি টাকা খরচায় কেনা হলেও তা চালানোর মতো দক্ষ জনবল নেই হাসপাতালে। ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা মেশিনগুলো ধুলো চাদরে ঢাকা পড়ে অকেজো হয়ে গেছে।

রোগীদের রুটিন টেস্টের জন্য পাঠাতে হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবার এক রোগীকে মেডিকেলে আনা-নেওয়ার জন্য লাগে দু’জন কারারক্ষী। এসব বিড়ম্বনার কারণে রোগের শুরুতে চিকিৎসা করাতে না পেরে বন্দিরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে ভুগতে থাকেন আরও জটিলতায়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারা হাসপাতালে ২০১১ সাল থেকে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড, সি আর সেট কম্পিউটারাইজড রেডিওগ্রাফিসহ নানা মেশিন। ফলে হচ্ছে না রক্ত, প্রস্রাব, ডায়াবেটিকসসহ বিভিন্ন ধরনের রুটিন পরীক্ষা।

এদিকে কারা হাসপাতালে রেডিওগ্রাফার নেই, কিন্তু এক্স-রে মেশিন কেনা হয়েছে। সনোলজিস্ট নেই, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন কেনা হয়েছে। এখানে পড়ে আছে অ্যানালাইজার মেশিন, অটোক্লেভ মেশিন আরও অনেক কিছু।

তবে কারা কর্মকর্তারা জানান, চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার পর থেকেই কারা কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জনবল চেয়ে আসছে। কিন্তু টেকনিশিয়ান বা জনবল প্রেষণে দিচ্ছে না তারা। তবে জনবল না থাকায় কারারক্ষীদের ডিপ্লোমা করিয়ে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যন্ত্রপাতির মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ায় সেটিও সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারা হাসপাতালে প্রায় ছয় হাজার বন্দির জন্য আছে মাত্র ২ জন ডাক্তার ও ২ জন নার্স। পাইলস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, যক্ষ্মা ও মানসিক রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা পাচ্ছে না সুচিকিৎসা। ইউরিন ইনফেকশন, টাইফয়েড, জন্ডিস রোগও নির্ণয় করা যায় না কারা হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম আদালতে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে আসা কারাবন্দিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারা হাসপাতালের ডাক্তার সমস্যার কথা শুনে ওষুধ দিয়ে থাকেন, রোগ নির্ণয় করা হয় না। তাই শুরুতে রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা বন্দিরা পায় না।

আরও জানা গেছে, রোগ যখন জটিল হয় তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে হয়। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোগ নির্ণয় পরীক্ষা চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ল্যাবে করতে হয়। রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন সময় লাগে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বন্দিকে ফের হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শামীম রেজা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই হাসপাতালে ২০১১ সাল থেকে এসব মেশিন অলস পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এসব মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। ল্যাব সচল করতে গেলে আবার নতুন মেশিন কিনতে হবে। এখন ব্যবহারের মতো শুধু ইসিজি মেশিন ছাড়া আর কিছুই নেই। রুটিন চেকআপের কোনো মেশিনই নেই।’

আবাসিক চিকিৎসক ডা. শামীম রেজা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে আরও বলেন, ‘প্রতিদিন চট্টগ্রাম কারা হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেসব রোগী আসে, তাদের থেকে তিনজনকে রুটিন টেস্টের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। আর একজন বন্দির সঙ্গে দু’জন কারারক্ষী থাকতে হয়। এসব সীমাবদ্ধতার জন্যই বেশি রোগী রুটিন টেস্টের জন্য পাঠানো হয় না।’

তিনি বলেন, ‘যদি কারাগার হাসপাতালের ল্যাবটি সচল থাকতো, তাহলে চিত্র বদলাতো। ল্যাবে যন্ত্রপাতি না থাকায় ল্যাব টেকিনিশিয়ান কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতে পারে না। আমরা বাধ্য হয়ে রোগের উপসর্গ দেখে ওষুধ দিয়ে থাকি বন্দি রোগীদের। এক্স-রে মেশিন বসানোর জন্য আলাদা কক্ষ নেই। অব্যবহৃত মেশিনটি হাসপাতালের এক কোণায় পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের ল্যাবের জন্য ২০১১ সালে যন্ত্রপাতি কেনা হয়। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি যথা স্থানে বসেনি। এগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী।’

ডা. শামীম বলেন, ‘সারওয়ার নামের একজন ল্যাব টেকনিশিয়ানকে নিয়োগ দেওয়া আছে। তিনি কোনো কাজ না করেই বেতন পাচ্ছেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!