চট্টগ্রাম কারাগারে দুদক, জেলার সোহেল রানার ঘুষকাণ্ডে চলছে জেরা

চট্টগ্রাম কারাগারে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার সাবেক জেলার সোহেল রানা ছাড়াও কারাগারের আরো ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিন মঙ্গলবারে ডেপুটি জেলার আবদুস সেলিমসহ ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিশনের পরিচালক মানসুর ইউসুফের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।

এদিকে একই অভিযোগে চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক, জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক, ইকবাল করিম চৌধুরীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক সূত্র। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ঢাকায়। সেখানে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের আরেকটি টিম কাজ করবে বলেও জানা গেছে।

দুদক জানায়, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম কারা বিভাগের এ ৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুদক পরিচালক মানসুর ইউসুফের নেতৃত্বে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুব আলমসহ তিন সদস্যের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যাদের
চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডেপুটি জেলার হুমায়ুন কবির হাওলাদার (বর্তমানে পঞ্চগড়), মো. ফখর উদ্দিন (বর্তমানে মাগুরা), মনজুরুল ইসলাম (বর্তমানে নড়াইল), মো. আতিকুর রহমান (বর্তমানে দিনাজপুর), মু. মুনীর হোসাইন (বর্তমানে ঝালকাঠি), আব্দুস সেলিম, হিসাব রক্ষক এমদাদুল ইসলাম (বর্তমানে বান্দরবান), সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর আনজু মিয়া (বর্তমানে পটুয়াখালী), প্রধান কারারক্ষী মো. মোসলেম উদ্দিন (বর্তমানে পঞ্চগড়), আব্দুল করিম (বর্তমানে ভোলা), বেলাল হোসেন (বর্তমানে বান্দরবান), সহকারী প্রধান কারারক্ষি লোকমান হাকিম (বর্তমানে খুলনা বিভাগের সদর দপ্তরে)।

ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার সাবেক জেলার সোহেল রানা
ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার সাবেক জেলার সোহেল রানা

এছাড়া বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় দপ্তরে থাকা কারারক্ষী কাউছার আলম, আরিফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শহীদুল মাওলা, শরীফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় দপ্তরের অংচিং হলা মার্মা, শাহাদাত হোসেন, আব্দুল হামিদ, রুহুল আমিন, রংপুর বিভাগীয় দপ্তরের ইকবাল হোসেন, শামীম শাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে থাকা এস এম শোভন, অলি উল্লাহ, মো. মাজহারুল হক খন্দকার, আবুল খায়ের (বর্তমানে নোয়াখালী), মহসিন তফাদার (বর্তমানে ফেনী) ত্রিভূষণ দেওয়ান (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া), স্বপন মিয়া (বর্তমানে নোয়াখালী), মিতু চাকমা (বর্তমানে বান্দরবান), জুয়েল মিয়া (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া), শাকিল হোসেন (বর্তমানে চাঁদপুর), বিল্লাল হোসেন (বর্তমানে বান্দরবান), শিবারণ চাকমা (বর্তমানে কুমিল্লা) ও ওসমান গণি (বর্তমানে নোয়াখালী)।

গত বছরের ২৫ অক্টোবর ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার ব্যাংক এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক এবং ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হন সোহেল রানা। এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানায় পুলিশ বাদি হয়ে মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের হওয়া ওই মামলার তদন্ত শুরু করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে, দুদকের তদন্তকালে সোহেল রানা ও তার স্ত্রী, শ্যালকের নামে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও যশোরে ২৬টি ব্যাংক একাউন্টে ১৫ কোটি টাকা লেনদেনেরও তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও চট্টগ্রাম কারাগারের ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ পায় বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক (বর্তমানে সিলেটে) এবং জ্যেষ্ঠ জেলসুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে (বর্তমানে বরিশাল) অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়। এছাড়া তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধান করার সুপারিশ করে কমিটি। পরে তাদের বিভিন্ন স্থানে বদলিও করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করে এ কমিটি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম কারাগারের দুর্নীতির সাথে আলোচিত জেলার সোহেল রানা একাই সম্পৃক্ত নয়। এর সাথে কারা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!