চট্টগ্রাম কলেজে এক পরীক্ষায় আরেক বিষয়ের প্রশ্নপত্র!

এমন কাণ্ডে পরীক্ষাই স্থগিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে

এক বিষয়ের পরীক্ষার দিনে আরেক বিষয়ের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয় পরীক্ষার্থীদের হাতে। গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে ঘটেছে এমনই এক ঘটনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৯ সালের অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হয়েছে এমন অদ্ভূত ঘটনার সঙ্গে। পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিল দর্শন বিষয়ের (বিষয়কোড ২২১৭০৭), কিন্তু পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পান বোটানি ২য় পত্রের (প্রাণ-রসায়ন, প্রাণিবিজ্ঞান, ভূগোল, মৃত্তিকাবিজ্ঞান— বিষয়কোড ২২৩০০৭)। প্রশ্নপত্রের এমন ওলটপালটে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাই স্থগিত করে দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময়সূচি সংশোধন করে ভুল প্রশ্নপত্র বিলি করা বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার (৪ জানুয়ারি)।

দায়িত্বজ্ঞানহীন এমন কাণ্ডের জেরে ১৫ ডিসেম্বর অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ওই সময়সূচি এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে জানানো হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত আগামী ১৯/১২/২০১৯, ২১/১২/২০১৯ ও ২৩/১২/২০১৯ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাসমূহ স্থগিত করা হল। স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ নিম্নলিখিত পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’

জানা যায়, ২৫ নভেম্বর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের দর্শন পরীক্ষা ছিল। দুপুর ১টা থেকে পরীক্ষার সময়। প্রশ্নপত্র দেওয়ার ১৫ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীরা খাতা (ওএমআর শিট) পূরণ করে অপেক্ষা করছিল প্রশ্নপত্রের জন্য। একটার বেল বাজতেই দায়িত্বরত পরীক্ষক প্রশ্নপত্র বিলি করেন। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়েই মাথায় হাত পরীক্ষার্থীদের। ২১ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠেয় পরীক্ষার প্রশ্ন ২৫ নভেম্বর! পরীক্ষার বিষয়ের সাথে প্রশ্নপত্রের মিল নেই। বিষয় এক, অথচ প্রশ্নপত্র আরেক। এ নিয়ে হট্টগোল হলে সেদিনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

প্রশ্নপত্র নিয়ে গন্ডগোলের কারণ
ট্রেজারি থেকে যখন প্রশ্নপত্র আনা হয় তখন বিষয়কোড মিলিয়ে দেখেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। কিন্তু সেই কাজটি সঠিকভাবে করেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম কলেজের পরীক্ষা কমিটিতে থাকা কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ব অবহেলায় ঘটে এমন ঘটনা। এদিকে একই ঘটনা ঘটে খুলনার সুন্দরবন কলেজেও। সেখানে ২ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠেয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাকেটও আরেক পরীক্ষার দিন খুলে ফেলা হয়। এ কারণে পুনরায় পরীক্ষার সময়সূচি সংশোধন করে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলেও এই বিষয়ে কথা বলতে কর্তৃপক্ষ নারাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম। কিন্তু প্রশ্ন দেখেই ভয় পেয়েছি। আমি কি রুটিন দেখতে ভুল করলাম নাকি! এখন তো নির্ঘাত ফেল করবো— কারণ এই বিষয়ে কোনো প্রিপারেশনই ছিল না। প্রথমে আমি ভেবেছি আমার ভুল, পরে সবাই দেখি একই কথা বলছে। স্যারদের জানালে উনারাও অবাক হন। তারপর সিদ্ধান্ত দেন এই পরীক্ষা বাতিল। তারিখ পরে জানাবে।’

সেলিনা পারভীন নামের এক অভিভাবক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে কতটা অবহেলা— টিচারদের এই কাণ্ড দেখলেই ক্লিয়ার। আজ কোন্ বিষয়ের পরীক্ষা সেটা কী মিলিয়ে দেখা উচিত ছিল না তাদের (শিক্ষকদের)। একজনও দেখলেন না। পরীক্ষা নিয়েও এ কেমন উদাসীনতা। পুরাই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।’

আরেক অভিভাবক তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, ‘উনারা অনেক ব্যস্ত। কোড-ফোড মিলিয়ে দেখার সময় আছে নাকি! কোনোমতে ৮টা ৫টা চাকরির মতন শেষ করে বাসায় ফিরবে সেই চিন্তায় থাকেন। নইলে পরীক্ষকরাও কেন প্রশ্ন দেখার আগে চেক করলেন না আজ কী পরীক্ষা!’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষা কমিটিতে থাকা কনভেনার বিপ্লব কুমার দত্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ ওইটা কোত্থেকে শুনলেন আপনি? এখন যারা বলছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন। এ বিষয়ে আমি জানি না কিছু।’

একই প্রসঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা তো একটু কনফিডেনশিয়াল। মানে আপনি অফিসে আসলে, আমাদের মুখোমুখি আলাপ হলে ভালো হয় আর কি। এগুলো তো সেনসিটিভ বিষয়। কনফিডেনশিয়াল বিষয়ে আমি এভাবে বলতে রাজি না।’

একই প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টা জানি। যে পত্রের পরীক্ষা ছিল, অন্য একটা পত্রের প্রশ্ন বের করে ফেলেছিল। সেটার জন্য নতুন প্রশ্ন করে আমরা পৌঁছায় দিছি। আজকে পরীক্ষা হয়েছে।’

ভুল কোথায়— সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নের ওপরে কোড নাম্বার থাকে। ওনারা ভুল করেছে। আর ভুলটা চট্টগ্রাম কলেজ করছে। ওই পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছিলাম। সে বিষয়ে আবার নতুন প্রশ্ন করে এটার পরীক্ষা নেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কোন সমস্যা নাই। আমাদের সমস্যা আর কি। আমাদের কষ্ট হলো অনেক। আবার প্রশ্ন করতে হলো আবার প্রশ্ন পৌঁছাতে হলো। শুক্রবার প্রশ্ন আনা হয়েছে। আজকে পরীক্ষা হয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!