চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে ৪৪ হাজার মৃত্যুর শঙ্কা কয়লা বিদ্যুতের বিষাক্ত বাতাসে

শুধু কক্সবাজারের বাতাসেই ছড়াবে ৭ কোটি টন বিষাক্ত গ্যাস

শুধু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষাক্ত বাতাসের দূষণেই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে তিন দশকে ৩০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ির কয়লা প্রকল্পের দূষণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১৪ হাজার মানুষ।

গবেষণায় পাওয়া এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও মিরসরাই, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি, বাগেরহাটের রামপালসহ বাংলাদেশে মোট ১৯টি বড় কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে দেড় লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা আরও হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে পরিবেশেরও।

টিআইবি বলেছে, সরকার ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত ১০টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নতুন করে কয়লা প্রকল্প না করার ঘোষণা আসেনি। রামপাল, মাতারবাড়ি, বাঁশখালী প্রকল্পসহ মোট ১৯টি কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৩ গুণ বাড়বে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ১১৫ মিলিয়ন টন বাড়তি কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করবে। ফলে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম কয়লা দূষণকারী দেশে রূপান্তরিত হবে, যা কার্বন নিঃসরণ কমানো সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

উদাহরণ হিসাবে টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পরিকল্পিত আটটি কয়লা প্রকল্প থেকে দূষণের ফলে ৩০ বছরে ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। শুধু জাপান সরকারের অর্থায়নে কক্সবাজারে মাতারবাড়িতে স্থাপিত কয়লা প্রকল্পের দূষণ ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার ও এর আশপাশের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

বাতাসে ছড়াবে ৭ কোটি টন বিষাক্ত গ্যাস

এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটার্স কিপারস বাংলাদেশের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়, কক্সবাজারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেখানে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সেখান থেকে যে দূষিত পদার্থ বের হবে, তা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো দেশে।

ওই গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, কক্সবাজার জেলা শহর ও সমুদ্রসৈকতের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মিত হলে সেখান থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ টন কার্বন ডাই–অক্সাইড, কয়েক হাজার টন ছাই ও ৫ হাজার ৮০২ কেজি পারদ নির্গত হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারের ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খরচ পড়বে ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৩টি স্থাপন করা হবে বন্যাপ্রবণ এলাকা মহেশখালীতে। চিংড়ি, পান ও লবণ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ওই এলাকা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকার ওপর প্রায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। দেশে উৎপাদিত লবণের ৭০ শতাংশ আসে এই এলাকা থেকে। আর এখানে বছরে ৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার মিষ্টি পান উৎপাদিত হয়। সবমিলিয়ে কক্সবাজারের হাজার কোটি টাকার পর্যটনশিল্পসহ সবকিছু ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!